করোনার এই মহামারি সময়ে বিশ্বের সব দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাই প্রায় এক সুরে বলছেন ফেস মাস্ক পরার কথা। যদিও মাস্ক পরে শতভাগ নিরাপদ থাকা যাবে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। এমনকি একেক রকম মাস্কের একেক কার্যকারিতার কথাও বলা হচ্ছে।
তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় মাস্ক পরতে বাধ্য আমরা। মুখে মাস্ক পরা এখন প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে সবার। তবে আপনি কি জানেন, মাস্ক সব সময় পরে থাকলে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে? হয়তো ইতোমধ্যে নিজে অনুভবও করছেন। যদি না জেনে থাকেন, তবে চলুন জেনে নেই মাস্কের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো।
শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়: সব সময় মুখে মাস্ক পরা থাকে বলে শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। হয়তো অনেকেই অনুভব করছেন এখন। এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেয়া ভালো- প্রশ্বাসের সময় শরীর থেকে যে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়, সেই কার্বন ডাই অক্সাইডই মাস্কে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে নাক-মুখ দিয়ে আবার আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। আর এই কার্বন ডাই অক্সাইড শ্বাস নেয়ার সময় শরীরে প্রবেশ করার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা বেড়ে যায়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ক্লান্তি ও ইমোশনাল আপসেট দেখা দেয়। এছাড়া যাদের অ্যাজমা, ব্রংকাইটিসের মতো ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ আছে, তাদের জন্য মাস্ক আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে।
দেখতে সমস্যা হয়: মাস্ক পরার কারণে আমাদের শরীর থেকে নির্গত বাতাস উপরের খোলা অংশ দিয়ে চোখে গিয়ে আঘাত করে। এতে করে চোখে অস্বস্তি তৈরি হয়, যে কারণে সে সময় চোখে আঙুল দেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় আমাদের। আর যদি হাতে ময়লা বা ভাইরাস থেকে থাকে, তাহলে আঙুল থেকে চোখে প্রবেশ করে। যারা চোখে চশমা পরেন, তাদের জন্য সমস্যাটা আরো বেশি হয়। কারণ প্রশ্বাসের বাতাস চোখে যেমন লাগে তেমনি তা চশমাতে গিয়েও জমা হয়। এতে এক পর্যায়ে চশমা ঘোলাটে হয়ে যায়। আর তাই কিছুক্ষণ পর পর চশমা পরিষ্কার করতে হয় তাদের। এতে চোখে ভাইরাস যাওয়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়: অদ্ভুত শোনালেও সব সময় মাস্ক পরার কারণে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন করোনাভাইরাসের কবল থেকে রেহাই পেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কিন্তু সব সময় মাস্ক পরে রাখলে শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকলে সংক্রমণ ঠেকাতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বিশেষজ্ঞরা এটাও পরামর্শ দিচ্ছেন যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও যেখানে লোক সমাগম নেই বা ১৫ ফুটের মধ্যে অন্য কোনো মানুষ নেই, সেখানে মাস্ক খুলে রাখাই ভালো। আর বয়স্ক ও শিশুদের জন্য মাস্ক উল্টো ক্ষতির কারণ হতে পারে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
খরচ বাড়ায়: সবাই তো এন-৯৫ বা সেরকম দামি মাস্ক কিনতে পারেন না সব সময়। আর একবার কিনলেও হবে না, আপনাকে এখন নিয়মিতই মাস্ক কিনতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিমাসে বিশেষ একটা বাজেট রাখতে হবে উন্নত মাস্কের জন্য। তবে সাধারণ মাস্কও খুব একটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে না এখন। করোনার কারণে প্রায় সবাই আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন। এক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে নতুন মাস্ক কেনার চেয়ে সংসারের জন্য বাজার করাটাই প্রাধান্য পায়।
অ্যালার্জি ও স্কিন র্যাশ: সব মাস্কই যে ত্বকে অ্যালার্জি বা র্যাশ তৈরি করে তা নয়, তবে বাজারে এখন হরেক রকমের মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। সেগুলো কোন উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে আপনি জানেন না। এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো সব সময় ত্বকের সংস্পর্শে আসলে অ্যালার্জি বা র্যাশ হতে পারে। কাপড়ের তৈরি মাস্ক দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে শরীরের ঘাম, মেকআপ ও বিউটি প্রডাক্ট, গাড়ির কালো ধোঁয়ার সাথে নির্গত ক্ষতিকর উপাদান, পোলেন এসব আটকে থাকে ওই মাস্কে।
অবশ্য মাস্কের এই কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জেনে একেবারেই মাস্ক না পরার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বোকামী। কারণ করোনা থেকে বাঁচতে প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে মাস্ক আপনাকে পরতেই হবে। তবে সব সময় না পরে মূলত বাইরে বের হওয়ার সময়, ভিড়ে গেলে পরুন। উন্নত মাস্ক কিনতে পারলে ভালো। নইলে ভালো কাপড়ের মাস্ক কয়েকদিন পর পর কিনুন, প্রতিদিন ব্যবহারের পর ধুয়ে ফেলুন। করোনার এই দুঃসময়ে দুঃখজনক হলেও মাস্ক আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।