বরিশালে সফল প্রতিমন্ত্রী শামীমকে নিয়ে ঢাকায় প্রসংশা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

বরিশাল রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের অবস্থানে আসা সদর আসনের সাংসদ ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের সাংগঠনিক শক্তিমাত্র নিয়ে প্রশ্ন ছিল দির্ঘ দিন। মন্ত্রীত্ব লাভের পর অনেকেরই ধারনা ছিল সাবেক এই সেনা কর্তা সাংগঠনিক ভাবে নিজ ঘরের প্রতিপক্ষ তার চেয়ে বয়সে অপেক্ষাকৃত কম মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ’র সাথে শক্তির ভারসাম্যে এগিয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারের বদলে উন্নয়ন ধারায় নিজেকে আবদ্ধ রাখায় সাদিক আবদুল্লাহই বরিশালের রাজনৈতিক মাঠ দখল নেন, অনুসারী ও বিশাল কর্মী বাহিনী তৈরী করতে সক্ষম হন বিনা প্রতিন্দ্বিতায়।

ফলে জাহিদ ফারুক শামীম বরিশাল রাজনীতিতে ব্যর্থ বলে কথা ওঠে। তিনি এই বাক্যের সাথে এক মত নন। তার মন্তব্য তিনি সাংঘষিক রাজনীতি এড়িয়ে দলীয় সভা নেত্রীর নির্দেশনায় পথ চলছেন। এনিয়ে বরিশাল প্রেক্ষাপটে নানা কথা চালু হয়েছে। কিন্তু করোনা ইস্যুতে বরিশালে দুর্যোগ কালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজ এলাকায় অবস্থান করে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী যে ভুমিকা রেখে চলেছেন, সেখানে তার দুরদর্শিতা ও জনতার কাছাকাছি পৌছে প্রসংশিত হচ্ছেন।

এমনকি ঢাকায় দলের হাই কমান্ডের কাছেও বরিশালের এই মন্ত্রীর ভুমিকা নিয়ে প্রাসংঙ্গিক আলোচনায় ভুয়াসি প্রসংসায় পঞ্চমুখ দলের নীতি নির্ধারকরা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরিশাল পরিস্থিতি নিয়ে খোজ খবর রাখতে গিয়ে মন্ত্রীপরিষদে জাহিদ ফারুককে রাখা যৌতিকতার ভুল করেননি বলে মনে করছেন, এবং আসস্থ করেছেন যে কোন সহায়তায় তার পাশে থাকবেন।

ঢাকার এক নির্ভরযোগ্য সুত্র এমন তথ্য জানিয়ে বলছেন, জাহিদ ফারুক শামীম হঠাৎকরেই জেন নিজেকে মেলে ধারছেন। একেভারে নিভেজাল ও সাদাসিদা গোছের এই রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মন্ত্রীত্ব লাভের পর একমাত্র তিনিই সর্বক্ষেত্রে বিতর্কের বাইরে ছিলেন। তার মন্ত্রনালয় পানিসম্পদ সেক্টরে অনিয়ম দুর্নীতি দমন ও সচ্চতা ফিরিয়ে আনা সহ বেশকিছু ব্যাতিক্রম ধর্মি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়ায় সরকারের মাধ্যে তাকে নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব বহুআগেই তৈরী হয়েছিল।

ঐ সুত্রটির দাবি, বরিশালের নেতৃত্বের লড়াইয়ে সাদিক আবদুল্লাহর সাথে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরী না করে নিবৃতে পথ চলায়ও দলীয় হাই কমান্ড এই নেতার ভাবনা চিন্তাকে স্বাগত জানিয়ে একজন স্বজন ব্যক্তি হিসেবে অপরাপর মন্ত্রী এবং দলের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ সুনজরে দেখতেন। বলা যায় অনেকটা হঠাৎ করে বর্তমান প্রেক্ষপটে বরিশাল রাজনীতিতে জাহিদ ফারুক শামীম বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। করোনা দুর্যোগে প্রথম থেকেই তিনি মাঠে থেকে গনসচেতনতা তৈরীতে নিজ অনুষারীদের কৌশলে মাঠে নামিয়ে দেন।

পাশাপাশি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দিতে করোনীয় পন্থা বের করার তাগিদ দিয়ে তা বাস্তবায়ন দেখতে চান। এরই ফলশ্রুতিতে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে করোনা শনাক্ত করন মেশিন দ্রুত বরাদ্ধ পেয়ে স্থাপনের কাজ শুরু হয়। তার অনুষারী ও চিকিৎসকরা আশা করছেন আজ অথবা আগামীকাল শনাক্ত করন মেশিন স্থাপন ও ল্যাবটি মন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করবেন। যদিও কথা উঠেছে এই মেশিন বরাদ্ধ পাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ’র ও ভুমিকা রয়েছে। এই নিয়ে বির্তক শোনা যায়।

স্থানীয় রানৈতিক সুত্রগুলোর দাবী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী দ্বিতীয় দফায় গোটা নগরী সহ সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ত্রন সরর্বরাহে পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হন। প্রতিদিন নিজেই মাঠে থাকছেন এবং কোন না কোন ওয়ার্ড বা ইউনিয়নে উপস্থিত হয়ে ত্রান বিতরনে অংশ নিচ্ছেন। সর্বশেষ হটলাইন তৈরী করে দুটি টেলিফোন নাম্বারে ত্রান থেকে বঞ্চিতদের যোগাযোগের আহ্বান রাখেন। সেখানেও সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

গত দুই দিনে হটলাইনে যোগাযোগে প্রায় সহাস্রাধিক ত্রান বঞ্চিত মানুষের ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেয়া হয়। সকাল থেকে রাত অবধি এই মন্ত্রীকে এখন বরিশালের চিত্রপটে খুব ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে। নগরীতে তাকে নিয়ে প্রসংসা মুলক আলোচনাও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে এবং ক্রমনয় তা জোড়ালো রুপ পাচ্ছে। অপর একটি সুত্রের দাবি করোনার এই দুর্যোগে যাকে বেশি মানুষ পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলেন সেই নেতা মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ‘র অনুপস্থিতি জাহিদ ফারুক শামীমের জন্য বেশ সহায়ক হয়েছে।

সুত্র জানায়, সাদিক আবদুল্লাহ করোনা আক্রান্তের আশঙ্কায় নিজ ঘরে হোমকেয়ারন্টেইনে রয়েছেন। এই সময় কালে তার অদৃশ্যতায় নগরীতে কমবেশি বির্তক শোনা যায় এবং আ’লীগের নেতাকর্মীরাই বিব্রত বোধ করতে দেখা যায়। অবশ্য সাদিক আবদুল্লাহ নিজ ঘরে থেকেই ত্রান বিতরন সহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও তা জাহিদ ফারুক শামীমের ভুমিকার কাছে ডাকা পরে যাচ্ছে। ফলে মেয়র সাদিককে নিয়ে বির্তক কমছে বৈকি বাড়ছে। অনেকের অভিযোগ তার দেয়া ত্রান দলীয় অনুষারীদের ঘরেই যাচ্ছে অথবা তাদের দেওয়া তালিকা অনুসারে বন্টন করা হচ্ছে। এনিয়ে নিম্ন শ্রেনীর মানুষের ক্ষোভের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

এতো আলোচনা সমালোচনা তবু কেন মেয়র সাদিক অদৃশ্যেই থাকছেন তা নিয়ে এখন রহস্য ঘেরা নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মাঠের রাজনীতিতে নিরব পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এই দুর্যোগে সরব হওয়া এবং কৌশলী বা ব্যাতিক্রমি ভুমিকা রাখায় এতোদিনের গোছানো সাদিক আবদুল্লাহর বরিশালে জাহিদ ফারুক প্রকৃত নেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হলেন। সাথে আভাস দিলেন তার রাজনীতির পথ পরিক্রমায় ‘ধীরালয় পথ চলা’ নীতি অনুষরন করে চলছেন।

ফলে প্রমানিত হলো মাঠের সাদিক আবদুল্লাহ শক্তিশালী হলেও ঘরের সাদিক আবদুল্লাহ এক নয়। তার অনুপস্থিতিতে বিকল্প নেতা তৈরী যেমন সহায়ক তেমন মাঠে কারিশমা দেখাতেও পারেন। উদাহরন তো এখন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম তৈরী করলেন। সুশিল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের সাংগঠনিক দুরদর্ষিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সেবক হিসেবে সেনা কর্মকর্তা থাকা কালীনও প্রসংসিত হয়েছিলেন।

সুযোগ পেয়েছেন, দেখিয়েও দিয়েছেন। তারই নমুনা কিভাবে দুর্যোগে নেতার ভুমিকায় মানুষের পাশে তার উপস্থিতি। ধারনা করা হচ্ছে বরিশালে ক্ষমতাশীন দলীয় রাজনীতিতে আগামীর চিত্রপটে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নতুন আদলে আসতে পারেন। এনিয়ে তার কোন মন্তব্য না থাকলেও তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, রাজনীতি মানেই জনসেবা, নেতৃত্ব নিয়ে লড়াই বা পদপদবীর বিষয়টি আপেক্ষিক মাত্র।