প্যারাডাইস কেলেঙ্কারিতে কাঁপছে বিশ্ব

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

বিশ্বের ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত গোপন তথ্যভাণ্ডার ফাঁস হয়ে গেছে। ১৮০টি দেশের ধনী, সুপরিচিত ও প্রভাবশালীদের এই তথ্যভাণ্ডার তাদের গোপন বিনিয়োগ, অর্থ পাচারসহ  কর ফাঁকির বিষয় প্রমাণ করে।

বেশির ভাগ তথ্যই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের, যারা কর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স হ্যাভেনে (কর দিতে হয় না কিংবা খুবই নিম্ন হারে কর দেওয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই এই কেলেঙ্কারির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যারাডাইস পেপারস’। স্থানীয় সময় রবিবার এই পেপারস সবার সামনে ফাঁস হওয়ার পর সারা বিশ্বেই হৈচৈ পড়ে গেছে। ফাঁস হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তির গোপন তথ্য। গোপন নথিতে উঠে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মতো হাইপ্রোফাইল মানুষের গোপন তথ্য।

প্যারাডাইস পেপারসে ১৪ জন বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিশ্বের কমপক্ষে ৪৭টি দেশের ১২৭ জন রাজনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তার সম্পদ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের দলিল রয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার প্রকাশিত ওই নথিতে আরও উঠে এসেছে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মরিসিও ম্যাকরি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ও আবুধাবির আমির খলিফা জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো প্রসেনকো, কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল মার্টিন, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সারলেফ, জর্দানের রানী নুর আল হুসেইন, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আবদুল আজিজসহ শতাধিক ব্যক্তির নাম।

শুধু তাই নয়, ভারতেরও সাত শতাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে এ তালিকায়। প্যারাডাইস পেপারসে বলা হয়েছে, করের হাত থেকে বাঁচতে দেশের বাইরের বিভিন্ন স্থানে অর্থ খাটিয়েছেন এই আলোচিত বিত্তশালীরা। কর দিতে হয় না বা নামমাত্র কর দিয়ে বিনিয়োগ করা যায় এমন স্থানগুলোই বেছে নিয়েছেন তারা। অনেকেই এসব লেনদেন করেছেন সবার চোখের আড়ালে। অর্থ আয়ের জন্য এমন গোপন বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। সামনে আরও নাম প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।   গত বছর ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসের মতো এবারও এসব নথি প্রথমে আসে জার্মান দৈনিক সুইডয়চে সাইটংয়ের হাতে। পরে সেসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) হাতে তুলে দেয় তারা। ১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথির এই ডাটাবেজে রয়েছে ১ হাজার ৪০০ গিগাবাইটেরও বেশি ডাটা।

নথিগুলোর প্রায় ৬৮ লাখ এসেছে অফশোর আইনি সেবা সংস্থা অ্যাপলবাই এবং করপোরেট সেবা সংস্থা এস্টেরা থেকে। ২০১৬ সালে এস্টেরা আলাদা হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান দুটি একসঙ্গে অ্যাপলবাই নামে কর্মকাণ্ড চালাত। আরও ৬০ লাখ নথি ১৯টি আদালতের করপোরেট রেজিস্ট্রি থেকে বের করা হয়েছে। আদালতগুলোর বেশির ভাগই ক্যারিবীয় অঞ্চলের। বাকি অল্প কিছু নথি পাওয়া গেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাস্ট এবং করপোরেট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়া সিটি ট্রাস্ট থেকে। প্যারাডাইস পেপারসে ফাঁস করা নথিতে রয়েছে ১৯৫০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ বছরের তথ্য। এসব নথি পেয়েছে বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের ১০০টি সংবাদমাধ্যম। ৫ নভেম্বর আইসিআইজে তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।