বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়া চীন’ উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটিতে বঙ্গবন্ধু কখনো পর্যটক, কখনো সমালোচক আবার কখনো লেখক হিসেবে ভালো কিছুর প্রশংসা করেছেন। এছাড়া সদ্যস্বাধীন হওয়া নতুন চীনের আর্থসামাজিক অবস্থা এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার কথাও বইটিতে উঠে এসেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় নয়া চীনের উন্নয়নের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু যে ভবিষ্যৎবাণী লিখেছেন, আজকের চীন ঠিক ততটাই উন্নত হয়েছে।

শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি ১৯৫৪ সালে রচিত। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন তখন আমার মা (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) তাকে কারাগারে খাতা কিনে দিতেন। সেই খাতার লেখা থেকেই ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বইয়ের মলাটে ‘আমার দেখা নয়া চীন’ লেখাটি লম্বালম্বিভাবে লেখা হয়েছে, চীনের অক্ষরের মতো করে। এখানে যে মনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন সেই শান্তি সম্মেলনে মনোগ্রামটা একটা শান্তির পায়রা। এটা একটা শান্তি সম্মেলনের ছবি।

hasina4

শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখনই চীনে গিয়েছি তখনই সেই শান্তি সম্মেলনের কিছু ছবি খুঁজেছি। কিন্তু সেই ছবি আমি পাইনি। চীনের একজন প্রেসিডেন্ট এক সময় বাংলাদেশে এসেছিলেন, তিনি আমাকে একটা অ্যালবাম উপহার দিয়েছিলেন। সেখানে ১৯৫৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশের পার্লামেন্টের নেতৃত্ব দিয়ে চীন ভ্রমণ করেছিলেন সেটার কিছু ছবি পেয়েছিলাম। সম্মেলনের সেই ছবিগুলো যখন আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি তখন তারেক সুজাত সেই ৫২ সালের সম্মেলনের ছবি, মনোগ্রামসহ অনেক তথ্য এনে দিল আমাকে। সে জন্য আমি তারেক সুজাতকে ধন্যবাদ জানাই। নয়া চীন এ জন্য বলা হতো যে, তখন সদ্যস্বাধীন একটি দেশ নামে পরিচিত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে বন্দি হয়েছিলেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আন্দোলন, ভুখা মানুষের খাদ্যের দাবিতে যখন মিছিল করছিলেন তখন তিনি আবার গ্রেফতার হন। ১৯৫২ সালের ২৮ জানুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে তিনি মুক্তি পান। ৫২ সালে চীনের শান্তি সম্মেলন হয়েছিল। পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দল চীনের শান্তি সম্মেলনে যান। সেখানে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আতাউর রহমান খানসহ বাংলাদেশের কয়েকজন আমন্ত্রিত ছিলেন।

hasina2

তিনি বলেন, তার (বঙ্গবন্ধু) চীনের সেই শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার পথে যেভাবে যেতে হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে রেঙ্গুন, রেঙ্গুন থেকে হংকং, হংকং থেকে পিকিং এবং সেই সমস্ত বিস্তারিত বিবরণ তিনি এই বইতে দিয়েছেন। পাশাপাশি এই বইয়ে লেখা আছে তিনি প্রথম সেই শান্তি সম্মেলনে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে বক্তৃতা দেয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেখানেই দিয়েছিলেন। সাধারণত কেউ যখন কোনো সম্মেলনে যান তখন সে শুধু সেই সম্মেলন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু এই বইটিতে আমরা দেখেছি, তিনি যেমন শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়েছেন। সেই সাথে চীনের মানুষের অবস্থাটা কী; তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা, তাদের ভেতর কী পরিবর্তন আসল, সেখানকার কৃষক শ্রমিক এমনকি ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রী ছেলে-মেয়েরাও, সকলের কথাও তিনি লেখনীতে বলেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর দেখার ভেতরে যেটা আমার মনে হয়েছে যে, তিনি শুধু একজন পর্যটক কিংবা তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন। আবার সমালোচক হিসেবে তাকে পাই, পর্যটক হিসেবে তাকে পাই। আবার যেখানে ভালো দেখেছেন সেখানে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তার দেখা এবং লেখনীর ভেতর দিয়ে যে জিনিসটি আমার সামনে এসেছে, তিনি এ লেখার ভেতর নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন যে কতটা প্রয়োজন সেখানে তিনি তা উল্লেখ করেছেন। তিনি যে রিকশায় ভ্রমণ করেছেন সেই রিকশাওয়ালার চরিত্রটাও চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

পাকিস্তানি শাসকদের কাছে প্রায় আড়াই বছর বন্দি থাকার পর তিনি যখন সেখানে যান এবং সবকিছু যখন দেখেন। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় তার ওপর নানা অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। তিনি যখন আবার নয়া চীনে যান তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের কথা কিছুই বলেননি। এখানে বিশেষ একটা দিক আমার নজরে আসে সেটা হলো, একজন রাজনৈতিক নেতা যেভাবে অত্যাচারিত হয়েছেন, পাকিস্তানি শাসকরা যে তাকে এত অত্যাচার করেছে, এত নির্যাতন করেছে সে ধরনের কোনো কথা কিন্তু তিনি বলেননি। তিনি সেখানে বলেছেন, আমাদের দেশের ভেতরে যা হচ্ছে সেটা তো হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমি বিদেশে এসে কোনো বদনাম করতে পারি না।

hasina4

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখানে দেখি যে অন্য কোনো নেতা বিদেশে গেলে যতটুকু না হয়েছে তার চেয়ে বেশি বদনাম করে। এত বড় মাপের একজন নেতা কত দূরদৃষ্টি এবং সহনশীল যে, দেশের বদনাম করা যাবে না। এই যে একটা দিক এটা খুব অবাক লাগে। নয়া চীন পড়লে আপনাদের ভালো লাগবে এবং তখনকার চীনের অবস্থান জানতে পারবেন। বইটি বের করার জন্য আমরা অনেকদিন কাজ করেছি। এই বইয়ের জন্য জামান ভাই উপদেশ দিয়েছেন, বেবী মওদুদ ছিল আমরা সবাই একসাথে বসে কাজ করতাম। এই বই লেখার মধ্য দিয়ে তিনি চীন সম্পর্কে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আজকের চীন সেই জায়গায় উন্নতি করেছে। বইটা আপনাদের হাতে তুলে দিতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত।

আমার লেখা গণচীনের একটি প্যারাগ্রাফ থেকে অনুষ্ঠানের পরিচালক রামেন্দু মজুমদার বলেন, নয়া চীনের শান্তি সম্মেলনে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি শ্রমিক পরিবারের গিয়েছিলেন। তারা কীভাবে জীবনযাপন করে সেটি দেখাই ছিল তার মুখ্য উদ্দেশ্য। সেখানে গিয়ে দেখেন, তারা নবদম্পতি। তার স্ত্রী রয়েছে স্বামী কাজ করতে গিয়েছে। এ কথা জানতে পেরে বঙ্গবন্ধু ভাবলেন যেহেতু তারা নবদম্পতি সুতরাং তাদের একটা উপহার দিতে হবে। কী উপহার দেয়া যায় কিছুক্ষণ পর তিনি তার নিজের হাতের আংটি খুলে ওই শ্রমিকের স্ত্রীর হাতে দিতে চান। এতে নববধূ কিছুটা ইতস্তত বোধ করেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, এটা আমার দেশের সংস্কৃতি, কালচার। নব বিবাহিত বাড়িতে আসলে তাদের কিছু দিতে হয়, আমি তাই এই আংটিটা দিচ্ছি।