ভুয়া সঞ্চয়পত্র দেখিয়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা ঋণ নেন তারা

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

ভুয়া সঞ্চয়পত্র জমা দিয়ে দুটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাৎকারী এক দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)। ওই দম্পতির নাম এইচ এম এ বারিক ওরফে বাদল ওরফে বাদল হাওলাদার ওরফে মোস্তাক আহমেদ এবং তার স্ত্রী মরশিদা আফরীন।

সিআইডির দাবি, একটি চক্র তৈরি করে তারা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তারা ভুয়া সঞ্চয়পত্র জমা দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতো। তারা প্রতারণার টাকায় রাজধানীর অভিযাত এলাকা গুলশান, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বাড়ি, গাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তাদের রয়েছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। ১৬ বছর আগে দায়েরকৃত একটি মামলার পর এ দম্পতি পালিয়ে ছিল। অবশেষে গত শুক্রবার খুলনার খালিশপুর এলাকা থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) টিম তাদের গ্রেফতার করে।

শনিবার সিআইডির সদর দফতরে সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

সিআইডি জানায়, এ চক্রটির মূলহোতা একজন শিল্পপতি। তার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যবসা ছিল। ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ করে সে ব্যবসা করে শিল্পপতি হয়েছে। তার পরিচয় পেয়েছে সিআইডি। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই শিল্পপতির নাম গোপন রেখেছে সিআইডি। শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা হবে বলে সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে সিআইডি কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, ২০০৪ সাল থেকে এই প্রতারক চক্র ২১টি ভুয়া সঞ্চয়পত্র তৈরি করে এর বিপরীতে এবি ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে আট কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে এবি ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার তৎকালীন ম্যানেজার জড়িত ছিল।

তিনি আরো বলেন, জালিয়াতি করে এই দম্পতি ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে। এই দম্পতির ব্যাংক হিসাবে জালিয়াতি করে উপার্জিত দুই কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে সিআইযি। এছাড়াও তাদের নামে গুলশান-২ এ প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের একটি ৯ তলা বাড়ি, উত্তরায় শত কোটি টাকার মূল্যের ১টি ৬ তলা বাড়ি, উত্তরখান এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের একটি দুই তলা বাড়ি, এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি ও জমির তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি জানান, ২০০৪ সালে এবি ব্যাংক থেকে এভাবে জালিয়াতি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। তবে তখন থেকে পালিয়ে ছিলেন মোস্তাক হাওলাদার। তখন ওই মামলায় তার সাজাও হয়েছে। এরপর থেকে সে পলাতক। গত ১৬ বছরে সে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ভারতে পালিয়ে ছিল। ২০১১ সালে গোপনে দেশে এসে আবার জালিয়াতি শুরু করে। ১৬ বছর ধরে পলাতক মোস্তাককে খুঁজছিল পুলিশ।

তিনি আরও জানান, ওই মামলায় এবি ব্যাংকের ধানমন্ডি ব্রাঞ্চের তৎকালীন ম্যানেজার আসিরুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০০৬ সালে তিনমাস কারাভোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে সে জামিনে মুক্ত হলে হৃদরোগে মারা যান। তবে এর সঙ্গে ব্যাংকের আর কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে কি না? তা তদন্ত করে দেখছে সিআইডি।

ব্যাংক থেকে ভুয়া সঞ্চয়পত্র দিয়ে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনায় দুদক ২০০৪, ২০১১ ও ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা পশ্চিম ও মোহাম্মদপুর থানায় সাতটি মামলা দায়ের করে। মামলাগুলো সিআইডি তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।