এবার মেতে উঠুন বিপিএল উন্মাদনায়

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

কার্তিকের মাঝামাঝি, এখনও ‘হেমন্ত’ আসেনি। তাই শীতের আমেজ বলতে যা বোঝায় তাও পড়েনি। তবে গরমের প্রচণ্ডতায় ঘামে নেয়ে ওঠার দিন আপাততঃ শেষ। এখন শরীর জুড়ানো শীতল বাতাস চারিদিকে।

সব মিলে চমৎকার সহনীয় আবহাওয়া। ঠিক এমন সময় সুফী-সাধক, পূণ্যত্মা হযরত শাহজালাল (রঃ) ও শাহ পরানের (রঃ) পূণ্যভূমি সিলেটবাসি ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত। আর মাত্র ৭২ ঘণ্টা পর শুরু হচ্ছে বিপিএলের পঞ্চম আসর। জাতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ। এবার মেতে উঠতে পারেন বিপিএল লড়াইয়ের উন্মাদনায়।

বিপিএল সারা বাংলাদেশেই সাড়া জাগায়। রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম-খুলনাসহ সব বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ছাপিয়ে প্রত্যান্ত অঞ্চলেও কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী , যুবক-যুবতী আর মাঝ বয়সী-সবার কাছেই বিপিএল মানেই ‘ধুম ধাড়াক্কা ক্রিকেট।’ গাঁয়ের দুরন্ত কিশোরও ভর দুপুরে টিভির সামনে বসে যায় চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি দেখতে। সেখানে শুধু সিলেটবাসী ক্রিকেট জ্বরে কাঁপবে কেন?

একটু খটকা লাগছে তাই না? লাগারই কথা। বিপিএলের আবেদন, আকর্ষণ ও উত্তজনা তো সারা দেশে সমানভাবে ছাড়ায়, তাহলে শুধু সিলেটের কথা বলা হচ্ছে কেন? একটু গোলমেলে ঠেকারই কথা। সিলেটের কথা বিশেষ করে বলা হয়েছে এই কারনে যে, বিপিএলের মতো আকর্ষণীয় আসর আগে কখনোই সিলেটে হয়নি, এবার হচ্ছে। শুধু হচ্ছেই না, পুণ্যভূমি সিলেট থেকেই যাত্রা শুরু হচ্ছে এবারের বিপিএলের। তাই সিলেটবাসীর উৎসাহ-আগ্রহ অন্য এলাকার ক্রিকেটপ্রেমীদের চেয়ে অনেক বেশি।

জানা গেছে, সিলেট শহরে বিপিএলকে কেন্দ্র করে অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। একটা সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। সিলেটবাসী আরও একটা কারণে পুলক অনুভব করছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক স্টেডিয়াম হবার পরও সেখানে এখন পর্যন্ত কোন টেস্ট, ওয়ানডে এমনকি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও পর্যন্ত হয়নি। মোট কথা, নামেই আন্তর্জাতিক ভেন্যু; কিন্তু বাস্তবে সিলেটে এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়নি।
অনুর্ধ-১৯ এর ম্যাচ আর ‘এ’ দলের খেলাই সার। বাংলাদেশ জাতীয় দল এখনও সিলেটে কোনো ফরম্যাটেই কোনো ম্যাচ খেলেনি। সেই শহরে বিপিএল। যেখানে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, নাসির, সাব্বির, মিরাজ, রুবেলসহ দেশের সেরা ক্রিকেটাররা খেলবেন। সাথে গেইল, সাঙ্গাকারার মতো বিশ্ব তারকারও দেখা মিলবে।

বিপিএলের ইতিহাসে আগে কখনই ঢাকার বাইরে খেলা শুরু হয়নি। এর আগের চার আসরেরই পর্দা উঠেছে রাজধানী ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। দ্বিতীয় ভেন্যু হিসেবে দ্বিতীয় পর্ব হয়েছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। পঞ্চম আসরে তার ব্যতিক্রম। এবার আসর শুরুই হচ্ছে সিলেট থেকে।

দেশের সব ক্রিকেট অনুরাগির চোখ এখন সিলেটের দিকে। প্রতিযোগি দলগুলোর কয়েকটি ইতোমধ্যে সিলেটের আবহাওয়া, মাঠ ও কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সিলেটেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েকটি দল গতকালও শেরে বাংলায় অনুশীলন করেছে। পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ছাড়া প্রায় অন্য সব বিদেশি ক্রিকেটাররা আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই সিলেটে অনুশীলনও করছেন। বৃহস্পতিবার সব দলই চলে যাবে সিলেটে।

টেস্ট ক্রিকেটের আবেদন কমেনি একটুও। টেস্ট এখনো ক্রিকেটের সত্যিকার আভিজাত্যের প্রতীক হয়েই আছে। ওয়ানডের বাজারও রমরমা। তবে হঠাৎ করেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।’

হবার যথেষ্ঠ কারণও আছে। মাত্র ২০ ওভারের ম্যাচ; কিন্তু পরিপূর্ণ প্যাকেজ। চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি। দর্শক বিনোদনের খোরাক ও রসদে পরিপূর্ণ। ক্রিকেটের সত্যিকার আভিজাত্য যাদের সেভাবে টানে না, ধৈর্য্য ধরে, কাজ কর্ম ফেলে পাঁচদিন খেলা দেখায় যাদের উৎসাহ কম, সৃষ্টি-সৃজনশীল ও শৈল্পিক ক্রিকেটের চেয়ে যারা চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ও রানের ফলগুধারা বেশি দেখতে পছন্দ করেন- তাদের প্রথম পছন্দ এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। ৫০ ওভারের ম্যাচের দর্শকপ্রিয়তা আগের মত থাকলেও টি-টোয়েন্টির মজাই আলাদা।

অনেকেই ক্রিকেটের এ ছোট ফরম্যাটকে ‘চিপসের’ সাথে তুলনা করেছেন। তাদের কথা, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হলো চিপস। খাদ্য ও পুষ্টিগুণ কম, কিন্তু দারুন মুখরোচক। ক্রিকেটের প্রথাগত, ব্যাকরণসম্মত ব্যাটিং-বোলিং এখানে অনুপস্থিত। তার বদলে অনেকটাই ধুমধাড়াক্কা মার; কিন্তু খেলা দেখায় আছে অন্যরকমের আনন্দ।

তাই তো ভারতের আইপিএল এখন বিশ্বের অত্যম আকর্ষণীয় ক্রিকেট আসর। আকার, আয়তন আর বাজার ও বাজেট হয়ত অতবড় নয়, তারপরও বাংলাদেশের বিপিএলও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এ কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতীয় দলের চরম ব্যর্থতা ও ভরাডুবির পর বিপিএল দেখতে মুখিয়ে সবাই। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৪ নভেম্বর পর্দা উঠবে।

সিলেট পর্বের আয়ুষ্কাল যদিও পাঁচ দিন; তবে খেলা হবে ৪ দিন। ৮ নভেম্বর রাতেই ইতি হবে এ পর্বের। তারপর আবার দু’দিন বিশ্রাম ও বিরতি। ১১ নভেম্বর শুরু ঢাকা পর্ব। চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। তারপর বিপিএল চলে যাবে চট্টগ্রামে। বন্দর নগরীতে খেলা শুরু ২৪ নভেম্বর। ২৯ নভেম্বর ওই পর্ব শেষে, শেষ রাউন্ড আবার শেরে বাংলায়। ১২ ডিসেম্বর ফাইনাল।