জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রাজবন্দী হিসেবে যে কারাগারে সাত মাস বন্দী ছিলেন, ৪০ বছর পর সেই রাজশাহী জেলা কারাগার পরিদর্শন করলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দুই দিনের সফরে বুধবার দুপুরে আবদুল হামিদ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে রাজশাহী পৌঁছান।
বিকেলে জেলা কারাগার পরিদর্শনে যান তিনি।
জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে ১৯৭৭ সালের মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজবন্দী হিসেবে রাজশাহীর এই কারাগারে ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ। সংসদ সদস্য থেকে ডেপুটি স্পিকার, স্পিকারের পদ পেরিয়ে চার বছর আগে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বভার নেন তিনি।
আবদুল হামিদ কারাগারে পৌঁছালে কারারক্ষীদের একটি দল তাকে গার্ড অব অনার দেয়। পরে তিনি তার সাত মাসের রাজশাহী জেলজীবনে কাটানো ৮ নম্বর ডিভিশন ওয়ার্ড (বর্তমান নাম মহানন্দা ওয়ার্ড) ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি ‘২০ সেল’ ও ‘কনডেম সেল’ ঘুরে দেখেন তিনি। ‘২০ সেলে’ ভয়ঙ্কর কয়েদীদের রাখা হয় বলে কারা কর্মকর্তারা জানান। কনডেম সেলে রাখা হয় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের।
ডিভিশন ওয়ার্ডে সহবন্দী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল, সাবেক নেতা প্রয়াত সরদার আমজাদ হোসেনসহ অন্যদের নিয়ে স্মৃতির কথাও বলেন আবদুল হামিদ।
তিনি জানান, শাস্তিস্বরূপ তৎকালীন জেল কর্তৃপক্ষ তাকে চার দিন চার নম্বর কনডেম সেলে আটক রেখেছিল।
রাজশাহী কারাগারে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় জেলের নিয়ম অনুযায়ী ‘এন্ট্রি বুকে’ সই করেন রাষ্ট্রপতি। পরে পরিদর্শন বইতেও সই করেন তিনি।
ডিভিশন ওয়ার্ডের সামনে একটি বেল গাছের চারা রোপণ করেন রাষ্ট্র্রপতি। এ সময় উপস্থিত সবাইকে রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি বন্দি থাকার সময়ও সেখানে একটি বেল গাছ ছিল।
ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে যোগ দেওয়া আবদুল হামিদ পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৬-৭৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলার কারাগারে বন্দি ছিলেন। পাকিস্তান আমলেও দুইবার কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে। দেশ স্বাধীনের পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামালে তাকে কারাগারে যেতে হয়। ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকার কারাগারে থাকতে হয়েছে আবদুল হামিদকে। সারা জীবন মাঠের রাজনীতি করে আসা আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর রসিকতা করে বঙ্গভবনকেও কারাগারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি একাধিকবার বলেছেন, আগেও জেলে ছিলাম। এখনও জেলে। তবে পার্থক্য হচ্ছে এখন স্যালুট দেয়। কারাগার থেকে আবদুল হামিদ রাজশাহীর ‘টি-বাঁধ’ পরিদর্শন করেন এবং পদ্মা নদীতে কিছু সময় নৌভ্রমণ করে রাত্রিযাপনের উদ্দেশ্যে রাজশাহী সেনানিবাসে যান। তিনি রাজশাহী সেনানিবাসে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তাকে স্বাগত জানান। সেনানিবাসে রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয় প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের একটি দল।
রাজশাহী সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার রাজশাহী সেনানিবাসে ১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নকে ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা)’ প্রদান উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।