মুমিনুল-ইমরুলদের কথার জবাব দিলেন মাশরাফি

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

প্রথমে ভারত সফরে গিয়ে মুমিনুল হক আর গতকাল (বুধবার) রাতে ইমরুল কায়েস- কেন যেন হঠাৎ নিজ দেশের মিডিয়ার ওপর নাখোশ। ঠিক দোষ চাপানো বলা যায় না। তবে দায় চাপানোর একটা প্রবণতা হঠাৎ দুজনার মাঝেই।

ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর টেস্টের সময় ভারতীয় ফাস্ট বোলারদের বলে নিজ দলের ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ার সম্ভাব্য কারণ জানতে চাওয়া হলে টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া মুমিনুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলে বসেন, আসলে সাংবাদিকরা নাকি সিরিজ শুরুর আগে ভারতীয় বোলারদের বোলিং সম্পর্কে ভীতিকর কথা লিখেন। সেই লেখা পড়েই বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি হয় ক্রিকেটারদের মাঝে। তাই প্রতিপক্ষ বোলারদের খেলতে একটা অন্যরকম ভীতি জন্মায়।

বুধবার রাতে সিলেট থান্ডার্সের বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলার পর সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইমরুল কায়েসও স্থানীয় মিডিয়ার ওপর দোষ চাপিয়ে বসেন।

প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি বিপিএলে আগেও ভালো খেলেছেন। আজকেও চাপহীন একটা ইনিংস খেললেন; কিন্তু জাতীয় দলে গেলে আপনার কী হয়? ফর্মও যেনো থাকে না। এখানে পার্থক্যটা কোথায়?’ জবাবে ইমরুল বলেন বসেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) এমন বলার জন্যেই আমি ফর্ম থেকে হারিয়ে যাই। ফর্মে থাকতে থাকতেই আমি ফর্ম থেকে হারিয়ে যাই।’

বলার অপেক্ষা রাখে না, ওপরের ওই মন্তব্য দুটিই বলে দেয় জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের হঠাৎ করে মিডিয়াকে দোষারোপ করার একটা মানসিকতা তৈরি হয়ে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ কেন এই দোষারোপের মানসিকতা?

ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগাররা প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। তারপরও সেভাবে কোনরকম সমালোচনা হয়নি। নেতিবাচক লেখার তো প্রশ্নই ওঠে না। টেস্টে ভরাডুবি এবং চরম অনুজ্জ্বল ও শ্রীহীন ব্যাটিং পারফরমেন্সের পর সমালোচনা হয়েছে। সেটাও বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায়নি।

ভারতীয় ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে টাইগারদের অসহায় অবস্থার কথাই লেখা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেখানে ইমরুল কায়েস এবং মুমিনুল দু’জনই চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। কলকাতায় দুই ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন মুমিনুল আর ইমরুল ইন্দোর আর কলকাতার দুই টেস্টের চার ইনিংসে একবারের জন্যও ডাবল ফিগারে যেতে পারেননি।

খুব স্বাভাবিকভাবেই ওই ব্যর্থতার বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। তারপরও মিডিয়ায় এমন কিছু লেখা হয়নি যে, প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে বসে ঢালাওভাবে দেশের প্রচার মাধ্যমের ওপর দোষ চাপাতে হবে।

তা নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝেও প্রশ্ন উঠেছে। বুধবার রাতে ইমরুল কায়েসের এমন মন্তব্যের পর থেকেই শেরে বাংলার প্রেস বক্সে নানা গুঞ্জন। হঠাৎ কেন এই দোষ চাপানোর প্রবণতা? এটা কতটা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য?

আজ এ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল এ মুহূর্তে দেশের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছে। জবাবে মাশরাফি অনেক কথার ভিড়ে সহযোগী ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছেন। খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে মাশরাফির বার্তাটি এরকম, ‘আপনি খেলোয়াড়, বাইরের বিষয় বাদ দিয়ে আপনি খেলা নিয়েই চিন্তা করেন।’

একই সঙ্গে সাংবাদিকদেরও ক্রিকেটারদের এমন মন্তব্যকে ব্যক্তিগতভাবে না নেয়ার অনুরোধ মাশরাফির। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমার কাছে মনে হয় আপনাদেরও (সাংবাদিকদের) বিষয়টা পারসোনালি না নেয়াই উচিৎ।’

মাশরাফি বোঝানোর চেষ্টা করেন, ‘অনেকে হয়তো মিডিয়ার চাপ সামলাতে অতটা অভ্যস্ত নয়। অনেক খেলোয়াড় আছে যারা বাইরের অনেক কিছুই খেয়াল করে। যেটা আমি বললাম, আমি খারাপ করলেও আপনারা লিখবেন, ভালো করলেও লিখবেন। এটাকে পারসোনালি না নেয়াই ভালো। আমার কাছে মনে হয়, অনেকে (খেলোয়াড়রা) এগুলো পড়ে বা দেখে। তাই চাপটা চলে আসে বা মাথায় নিয়ে নেয়।’

মাশরাফি অবশ্য সেই লেখা পড়ে চাপ না নেয়ার পক্ষে। তার মতে সেটা অপেশাদার মানসিকতার পরিচায়ক, ‘এ জিনিসটা পেশাগত জীবনে প্রয়োজন নেই।’

মাশরাফি পরিষ্কার বলে দেন, ‘আসলে মিডিয়াকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ খারাপ খেললে বা ভাল করতে না পারলে সমালোচনাধর্মী লেখা হবেই।’ তিনি বুঝিয়ে দেন ক্রিকেটারদের কাজ খেলা। আর সাংবাদিকদের কাজ লিখা। খারাপ খেললে তারা লিখবেই।

‘পেশাগত দিক থেকে চিন্তা করলে আপনিও (সাংবাদিকরা) একটা জায়গায় আছেন, খেলোয়াড়রাও একটা জায়গায় আছে। সবাই যে যার জায়গা থেকে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। মিডিয়াকে দোষ দিয়ে তো আসলে লাভ নেই। আবার মিডিয়াকে দোষ দিয়ে ভালোও খেলা যাবে না। আবার মিডিয়া যদি দোষ দিয়েই থাকে, সেটা আমার মাঠের খারাপ পারফরম্যান্সের কারণেই।’

মাশরাফি তার নিজের জীবনে দেখা ও শেখার বিষয় তুলে ধরে বলেন, ‘যা লেখা হয়, সেটা যদি নিজের কাছে মনে হয় যে মানসিকভাবে চাপে ফেলে দেবে তাহলে ইগনোর করাই ভালো। সাধারণত বড় খেলোয়াড়রা এটাই করে। যেটা বললাম, যার যেটা পেশা সেদিক থেকে স্থিতিশীল হওয়া জরুরি।’