নির্বাচনকে সামনে রেখে একের পর এক প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা পাচ্ছেন এমপিরা। এবার গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বরাদ্দ পাচ্ছেন তারা। নেয়া হচ্ছে এক হাজার ৭৩০ কোটি টাকার প্রকল্প।
নির্বাচনী এলাকায় নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি পূরণে এমপিদের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এ প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। সব প্রক্রিয়া শেষ করে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। দেশের ৪৯১টি উপজেলার প্রতি উপজেলায় কমপক্ষে ১টি করে তিনতলা চার হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট মোট ৫২০টি গ্রামীণ বাজার নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরে প্রথমবারের মতো এমপিদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে ২০১০ সালের মার্চে চার হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করে। ওই সময় প্রত্যেক এমপিকে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত দশম সংসদে নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে ছয় হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় এমপিদের। ২০১৫ সালের মে মাসে তার অনুমোদন দেয় সরকার।
এতে সিটি কর্পোরেশনের বাইরে এমপিরা বরাদ্দ পেয়েছেন ২০ কোটি টাকা করে, যা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই শেষ হয়ে যাবে। তাই নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গত মাসে ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের জন্য আলাদা প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা এমপিরা পছন্দমতো মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, গীর্জা, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা এবং খেলার মাঠ উন্নয়নে ব্যয় করতে পারবেন।
স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি কৃষির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। কৃষিপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে হলে গ্রামীণ হাট/বাজার নির্মাণ জরুরি। গ্রামাঞ্চলে হাট/বাজারের পূর্ণ সুবিধা গ্রামীণ কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা (ব্যবসায়ী) পান না।
বর্তমান বাজারব্যবস্থায় কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে স্বল্পমূল্যে উৎপাদন স্থলেই উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় গ্রামীণ বাজারে মালামালের সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় ভোক্তাদের বেশি দামে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়। আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামীণ বাজার চার হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভৌত অবকাঠামো সুবিধা প্রদান করা হলে কৃষি ও অকৃষি পণ্যের সহজ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষক প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে তার পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এক্ষেত্রে ভোক্তারাও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সহজে ও ন্যায্য মূল্যে কেনার সুবিধা পাবে।
প্রকল্পটি দেশের সব উপজেলায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পল্লী অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, কৃষিপণ্য ন্যায্য মূল্যে প্রাপ্তি, ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পরিবহন ব্যয় হ্রাস ও প্রকল্প এলাকায় উন্নত হাট/বাজার অবকাঠামো তৈরি হবে। এর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে পল্লী এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দারিদ্র্য হ্রাস পাবে বলেও মনে করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌতঅবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে এই প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। গুরুত্ব বিবেচনায় একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছে।