অনলাইন ডেস্ক :: ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যা প্রতিরোধ’ প্রতিপাদ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। কিন্তু বরিশাল বিভাগ জুড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য রয়েছে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
অন্যদিকে এ অঞ্চলে মানসিক রোগীর সংখ্যা যেমনি বেশি তেমনি আত্মহত্যাকারীর সংখ্যাও কম নয়। বিভিন্ন থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১২ মাসে আত্মহত্যা করেছেন ৮৯ জন। ২০১৯ সালের মাত্র ৯ মাসেই আত্মহত্যা করেছেন ১১০ জন। আত্মহত্যার এই বৃদ্ধি উদ্বেগজনক।
শুধুমাত্র শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের বরিশাল ফরেনসিক বিভাগে প্রেরিত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন থানা পুলিশের লাশের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়েছে- আত্মহত্যাকারীদের অর্ধেকও বেশী মানসিক রোগী কিংবা বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে বিষ পান অথবা গলায় ফাঁস দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফরেনসিক বিভাগ গেল ২১ মাসে ৫শ’র অধিক লাশের ময়না তদন্ত করেছে। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন এমন ১৯৯ জনের মধ্যে বরিশাল জেলার ১২৯টি, পটুয়াখালী জেলার ১৯টি, ঝালকাঠীর ১৭টি, পিরোজপুর ও বরগুনার ১৪টি করে এবং ভোলা জেলার ৬টি।
পুলিশের সুরাতহাল রিপোর্টে ১৯৯ জন আত্মহত্যাকারীর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ৮৩ জন আত্মহত্যা করেন স্বামী বা স্ত্রী কিংবা অন্যকারো সাথে ঝগড়া করে। ৩৩ জন আত্মহত্যা করেন প্রেমিকের অন্যত্র বিয়ে হওয়া কিংবা পরিবারের ঠিক করা পাত্র বা পাত্রীর সাথে বিয়ে করতে রাজি না থাকা ও প্রেমকে অস্বীকার করার কারণে। ৪২ জন আত্মহত্যা করেন পরিবারে পিতা-মাতা বা ভাই-বোন কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে কোন কিছুর আবদার বা দাবি করে তা পূরণ না হওয়ার কারণে। ১১ জন আত্মহত্যা করেন সমাজের মানুষের সামনে অপমানিত, লাঞ্ছিত হওয়া কিংবা লজ্জা পাওয়ার কারণে। এ ছাড়া অজ্ঞাত কারণে আত্মহত্যা করেন ৩০ জন।
২১ মাসে ১০ অবুঝ শিশুও বিষপান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল। ১৯৯ জন আত্মহত্যাকারীর মধ্যে ১২১ জনই নারী, তাদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তপন কুমার সাহা বরিশাল বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক। ফলে দীর্ঘ এক যুগ ধরে বরিশাল বিভাগে এ রোগের চিকিৎসক সংকটে মানসিক রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বজনরা। সেখানে কীভাবে এ অঞ্চলে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন’ঘটানো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
ডা. তপন কুমার সাহা বলেন, ‘মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় এ রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বড়েই চলছে। কেননা একজন মানসিক রোগী দেখে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষও নিজেকে যে কোন সময় বা যে কোন মুহূর্তে মানসিক রোগী ভাবতে শিখে। পাশাপাশি সেও মানসিক রোগীর ন্যায় আচরণ করতে শুরু করে দেয়।’
বরিশালে মানসিক রোগীর বৃদ্ধির জন্য সামাজিক, বংশগত ও নৈতিক অবক্ষয় অন্যতম কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক।