বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) দক্ষিণবঙ্গের একটি স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের জন্য রয়েছে একটি মেডিকেল সেন্টার। তিন কক্ষ বিশিষ্ট এ চিকিৎসা কেন্দ্রে আছেন দুইজন ডাক্তার, একজন মেডিকেল এ্যাসিস্টান্ট ও একজন নার্স ।
আর জরুরী ভিত্তিতে রোগী বহনের জন্য রয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্স। চিকিৎসাখাতে নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ। ফলে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এখানে তারা নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আসলেও মাথা ব্যথা, জ্বর, পেট খারাপের ওষুধ ছাড়া কিছুই মেলে না এ মেডিকেল সেন্টারে । রোগীদের শুধুমাত্র মাথা ব্যথা, জ্বর, পেট খারাপের জন্য সর্বোচ্চ ২ দিনের ঔষধ দেওয়া হয় ।এছাড়া অনান্য রোগের ক্ষেত্রে প্রেসক্রিপসন লিখে দেয়া হয়, বাকি ওষুধ বাহির থেকে কিনে নিতে হয়। ফলে, অনেকে অর্থের অভাবে কিনতে পরেন না প্রয়োজনীয় ওষুধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে পাওয়া দুষ্কর। বিভিন্ন সমস্যার জর্জরিত শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল , এ্যাপেলো , ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল সহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিতে যেতে হয়। এতে যেমন সময় সময় বেশী লাগে তেমনি গুনতে হয় বাড়তি অর্থ ।
প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করে শিক্ষার্থীরা বলছে, মানুষের মৌলিক চাহিদায় চিকিৎসা সেবার কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়নে পরিপূর্নভাবে ব্যার্থ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবনের নিচ তলায় বাম দিকের তিনটি রুমে অস্থায়ীভাবে চলছে ববি মেডিকেল সেন্টারের কার্যক্রম। একটি রুমে ডাক্তারের চেম্বার, অপর একটি রুমে রোগীদের জন্য একটি বেড পাতানো থাকলেও অন্যটি অব্যবহৃত পড়ে আছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম হিসেবে আছে রোগীদের জন্য দুটি বেড, প্রেসার মাপার দুটি ডিজিটাল মেশিন ও ওজন মাপার একটি যন্ত্র যা বর্তমানে অকেজো । এছাড়া প্যাথলজিক্যাল টেস্টের নেই কোনো যন্ত্রপাতি ।
জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে দুজন ডাক্তার দিয়ে যাত্রা শুরু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের। যাত্রালগ্ন থেকেই মেডিকেল সেন্টারটির জন্য থাকে না পর্যাপ্ত বরাদ্দ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৩৭ কোটি ১১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও চিকিৎসাখাতে আলাদাভাবে যে বরাদ্দ তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল । বিগত কয়েক বছরে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বৃদ্ধি পায়নি।
প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু লোকবল আর বরাদ্দের অভাবে যথাযথ সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীদের এখানে কেবল প্রাথমিক চিকিৎসাই মেলে। তাই প্রয়োজনীয় স্যালাইন, নাপা, হিস্টাসিনসহ অল্প কয়েকটি পদের ওষুধ রয়েছে, বাকিটা প্রেসক্রিপশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসক ডা. মো: তানজীন হোসেন জানান, বর্তমানে মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি না থাকার পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারছেন না তারা। এছাড়াও জনবল প্রয়োজনের তুলনায় কম বলেও জানান তিনি ।
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য (দায়িক্তপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান বলেন, মেডিকেল সেন্টারের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। অবকাঠামো ও জনবল সংকটের কারনে আমরা কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছি না। তবে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদী তিনি।