বরিশালে জন্ম নিয়েছে বিরল এক শিশু। যার হাত-পা, মুখ নাক সবকিছু ঠিক থাকলেও চোখ দুটো ত্বকের ভেতরে আটকানো। আবার পুরো শরীরে পড়ে আছে সাদা একটি আবরণ। যার মাঝে মাঝে রয়েছে লালচে দাগ।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই ছেলে শিশুটিকে জন্মদেয় তার মা। বর্তমানে সে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরশেফালী গ্রামের হাবিবুর রহমান ও মর্জিনা দম্পতির।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এটি খুব রেয়ার একটি রোগ। কয়েক লাখের মধ্যে একজন শিশুর এমন পরিণতি হলেও হতে পারে। যা মায়ের গর্ভ থেকেই হয়ে আসে। তবে এ রোগের এখন পর্যন্ত কোন চিকিৎসা আবিস্কার হয়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাহিদ হোসেন।
হাসপাতাল ও অভিভাবকদের সূত্রে জানাগেছে, মর্জিনা বেগমের যথাসময়ে সন্তান প্রসব হয়েছে। তবে সেটি বরিশাল নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শিশুটি ভূমিষ্ট হওয়ার পর পর দেখা যায় অন্য সকল স্বাভাবিক শিশুদের মতো দেখতে নয়। হাত-পা, মুখ, নক সব কিছু থাকলেও চোখ দুটো ত্বকের ভেতরে আটকা।
আবার পুরো শরীরে সাদা একটি আবরণ, যার মাঝে মাঝে লালচে দাগ। এমন পরিস্থিতি দেখে অভিভাবকরা দেরি না করে শিশুটিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসলে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক শিশুটিকে নবজাতক ইউনিটে ভর্তি করে দেন।
নবজাতক ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সেবিকারা জানান, ২ কেজি ওজন নিয়ে ১ দিন বয়সী শিশুটি ভর্তি হয়েছে। ভর্তির পরপরই চিকিৎসকরা শিশুটির চিকিৎসা শুরু করেছেন। যা দেখে কেউ কেউ বিরল চর্ম রোগ বলেও আখ্যায়িত করছে। নাবজাতক ইউনিটের চিকিৎসকদের মতে শিশুটি হার্লেকুইন বাচ্চা। তবে তার ভবিস্যৎ নিয়ে এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি শেবাচিমের চিকিৎসকরা।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাহিদ হোসেন জানান, শিশুটি বিরল জিনগত সমস্যায় আক্রান্ত। কয়েক লাখে এ ধরনের একটি শিশুর দেখা মিললেও মিলতে পারে। আমার চিকিৎসা পেশায় এই শিশুটি সহ সর্বোচ্চ ৫/৬টি নবজাতক দেখেছি।
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে শিশুটির শরীরে যা হয়েছে তাকে ইকথিয়োসিস বলা হয়ে থাকে। স্বাভাবিক মানুষের চামড়া যেভাবে তৈরি হয়, এই শিশুটির ক্ষেত্রে তা হয়নি। এক কথায় শরীরের চামড়া তৈরি না হওয়ায় দেখতে এমন লাগছে। হয়তো শিশু বয়সে চিকিৎসা করে নবজাতকের শরীরের ওই জায়গাগুলো মলিন রাখা যেতে পারে। কিন্তু ওর ভবিস্যৎ অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।