বরিশালের গৌরনদী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সুমন মোল্লাসহ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সুজন ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন খলিফার নেতৃত্বে ১০/১২ জন ক্রুদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী রোববার বিকেলে উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে।
হামলাকারীরা এ সময় উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি, সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী, নারী-পুরুষ নকল নবিশ, অফিস সহায়কসহ ১২জনকে পিটিয়ে আহত করাসহ অফিসের কম্পিউটার, আসবাবপত্র ভাংচুর ও গুরুত্বপুর্ন নথিসহ কাগজপত্র তছনছ করেছে। গুরুতর আহত দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ কাওছার হোসেন (৬০) সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক এনায়েত হোসেন (৩৫)কে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় উপজেলা সাব রেজিষ্টার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা বাদি হয়ে ওই তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২জনকে আসামী করে ওইদিন রাতে গৌরনদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত দলিল লেখকগন আজ মঙ্গলবার থেকে কলম বিরতি কর্মসুচী পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী, সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মামলার এজাহার ও আহতদের সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার দক্ষিন বিজয়পুর গ্রামের আব্দুর রশিদ হাওলাদারের স্ত্রী ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সুজনের মা সিরিয়া বেগম তার প্রতিবেশী মৃত আব্দুর রহিম খানের স্ত্রী হাওয়া বেগম ও তার ৬ সন্তানের কাছ থেকে দক্ষিন বিজয়পুর মৌজার ০১.২৯ শতক জমি ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকায় ক্রয় করেন।
গত ২০আগষ্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্থানীয় দলিল লেখক মোঃ কামাল হোসেন মিয়া ৭জন দাতাসহ ওই জমির একটি দলিল লিখে দলিলটি উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে দাখিল করেন। দাতাদের মধ্যে ৪ জনের জন্ম সনদ নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় সাব রেজিষ্টার মোবাশ্বেরা সিদ্দিকা দলিলটি রেজিষ্ট্রি করতে রাজি হননি।
এ ঘটনায় ক্ষুব্দ হামলাকারীরা ওইদিন সাব রেজিষ্টার মোবাশ্বেরা সিদ্দিকা ও অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে নানা প্রকার হুমকী ধামকি দিয়ে চলে যায়। পরবর্তিতে ৪ জনের জন্মনিবন্ধন কার্ডে জালিয়াতি প্রমানিত হওয়ায় সাব রেজিষ্টার মোবাশ্বেরা সিদ্দিকা দলিল লেখক মোঃ কামাল হোসেন মিয়াকে বহিস্কার করেন।
উপজেলা সাব রেজিষ্টার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা জানান, বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ওই তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২জন ছাত্রলীগ নেতা তার রুমে ঢুকে ওই ৪জন দাতার ৪টি নতুন জন্ম নিবন্ধন কার্ড দাখিল করে। ওই কার্ড পর্যালোচনা করে তিনি দেখেন যে, একজন দাতার পূর্বের জন্ম সনদে জান্নাত আক্তার ও নতুন জন্ম সনদে মোসাঃ জান্নাত খানম লেখা আছে। এ ছাড়া ওই জন্ম সনদে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার কার্যালয়ের ভেতরে বসে এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ কাওছার হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ক্রুদ্ধ ওই তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ ১০/১২জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী দাঁ, হাতুড়ি, লাঠিশোটা নিয়ে দলিল লেখক কাওছার হোসেনের ওপর হামলা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
তখন ওই অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা তাদের সকলকে এলাপাতারী মারধর করে। হামলায় আহতরা হলেন, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ কাওছার হোসেন (৬০), সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী সাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু (৪০), মোঃ খলিলুর রহমান(৪৫), অফিস সহায়ক এনায়েত হোসেন (৩৫) নকল নবিশ আমিনুল ইসলাম(৩২) মোঃ দুলাল (৩৫) রুমানা খানম (৩৩), রাহিমা (৩৫), জুলেখা (৩০), রেশমা খানম (২৮) দলিল লেখক সজল দাস(৩৪), কাজী বিপ্লব(৪৮), কেরামত আলী(৪৮)।
দলিল লেখক মোঃ কাওছার হোসেন জানান, হামলাকারীরা তাকে মারধর করে টেনে হেচরে অফিস থেকে বের করে অপহরনের উদ্দেশ্যে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তার আতœচিৎকারে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মোঃ রেজাউল করিম টিটু এগিয়ে এসে তাকে অপহরনের হাত থেকে রক্ষা করে। তবে হামলাকারীরা এ সময় তার একটি দামী মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সুজন জানান, জন্ম নিবন্ধন কার্ডের সমস্যার সমাধান করে দলিলটি রেজিষ্ট্রি করে দিতে দলিল লেখক মোঃ কাওছার হোসেন তার কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়েছেন। টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সে দলিল রেজিষ্ট্রি করতে বাঁধা দেয়। তার পরও সে দলিলটি রেজিষ্ট্রিতে বাঁধা না দিতে কাওছার হোসেনের কাছে অনুনয় বিনয় করে। তাদের অনুরোধ না রাখায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার জানান, এ ঘটনায় উপজেলা সাব রেজিষ্টার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা বাদি হয়ে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি সুমন মোল্লাসহ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সুজন ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন খলিফারসহ অজ্ঞাতনানা ১০/১২জনকে আসামী করে রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে থানায় একটি মামলা করেছেন।
গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। থানা পুলিশ আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।