বরিশাল নগরসহ মহানগর এলাকায় বেশ জোরেসোরে এগিয়ে চলছে পুলিশের সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম। যেসব কাজে বেশ সাড়াও পড়েছে এরইমধ্যে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে মাদক, জঙ্গিবাদ, সাইবার ক্রাইম, সন্ত্রাস, বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও ইভটিজিংবিরোধী সচেতনতামূলক সভাগুলো বেশি কাজে আসছে।
যদিও সুশীল সমাজের মতে, সন্তানদের খারাপ ও ভালো শিক্ষা দেয়ার দায়িত্ব যেমনি পরিবারের, তেমনি শিক্ষকদেরও। তাই শুধু প্রশাসন নয়, তাদেরও উচিত সন্তানদের নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া। যাতে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি করা যায়।
এদিকে, বরিশাল মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই নগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক সভা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দিকে এ সভাগুলো রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে থাকলেও এখন এগুলো অনেকটাই আন্তরিকতা ও বন্ধু সুলভ পরিবেশের মধ্য দিয়ে করা হচ্ছে। নানান গল্পের ছলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদক, জঙ্গিবাদ, সাইবার ক্রাইম, সন্ত্রাস, বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও ইভটিজিং সংক্রান্ত বিষয়গুলো আলোচনা করা হচ্ছে। যেসব আলোচনায় পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) থেকে শুরু করে পুলিশ কমিশনার পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা থাকছেন। একইসঙ্গে এসব সভায় অভিভাবক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদেরও রাখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক সভা নিয়ে আমাদের বড় ধরনের একটা প্ল্যান রয়েছে। মাঝখানে পরীক্ষার জন্য এগুলো বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন আবার শুরু হয়েছে। আমাদের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান সরাসরি সভাগুলোতে যোগ দিচ্ছেন। এগুলোর বিষয়ে মনিটরিং করছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা শৃঙ্খলা থাকবে এটা সবাই চায়। আর এজন্য আমরা বরিশাল মহানগর পুলিশ কাজ করছি। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে, যাতে তারা ভদ্র ও ভালোভাবে থাকার বিষয়টি বোঝে। অর্থাৎ যেটা শোভন না, সে বিষয়ে তাদের অবহিত করতে হবে। সমাজে একটা মূল্যবোধ আছে, সেটা শিখতে হবে। শোভন-অশোভনের বিষয়ে মানুষকে জানাতে হবে। এ সচেতনতামূলক কর্মসূচিও আমরা হাতে নিয়েছি। যদিও এগুলো পরিবারের ভেতর থেকেই আসতে হবে।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, শুধু বিদ্যালয়ে নয়, আমরা মাদরাসায়ও অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম করছি। নিম্নবিত্তসহ উচ্চবিত্ত সবপর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সমান চোখে দেখা হচ্ছে। তবে বয়স ও শ্রেণিভেদে আলোচনা বিষয়বস্তুর পরিবর্তন ঘটছে। যেমন ইভটিজিংয়ের বিষয়টি নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। আর প্রাথমিকের বিষয়টি আলাদা। কারণ বয়সের একটা বিষয় রয়েছে তাদের। মনে রাখতে হবে, সবাই সবকিছু গ্রহণ করতে পারে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গার্ডিয়ানদেরও সচেতন করা হচ্ছে। কারণ একটা মানুষের জন্য তার ঘর বা বাসাটা হলো সব থেকে ইফেকটিভ প্রতিষ্ঠান। পরিবারের বন্ধন কিংবা পরিবারের প্রতিষ্ঠানটাকে শিক্ষা ক্ষেত্রের আতুরঘর বলা যায়। এখান থেকে আমিসহ সবাই মূল জিনিসটা শিখছে। আর পড়াশুনাটা স্কুল থেকে শিখছে। যদিও এখন গার্ডিয়ানরা বাচ্চাদের পড়ালেখার চাপে রাখছে। একবারের জন্যও ভালো কথা বলার সুযোগ পায় না।
মাদক সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যেখানে ছেলে খারাপ কিছু করলেও বাবা তাকে শাসন করে না, পাত্তা দেয় না। এ থেকে বিরত থাকতে হবে অভিভাবকদের।
তিনি বলেন, যা করতে চাচ্ছি সেটা হলো, আমরা মশালটা জ্বালিয়ে দেবো, তবে জ্বলতে হবে নিজেকেই।