সমাজের কিছু মানবিক মানুষের সহযোগিতায় থাকার ঘর পেয়েছেন হাত-পা হারানো বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রিনা আক্তার। শিশুকালে বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকাবস্থায় রেললাইনে বসে খেলার সময় ট্রেনের হর্ন শুনতে না পেরে ডান হাত ও পা হারাতে হয়েছে তাকে।
বাবা মোজাম্মেল হক তখন খুলনা জুট মিলে দারোয়ানের চাকরি করতেন। সেখানেই দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। ১০ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে হারান রিনা। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে খুলনা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন তাদের মা জয়নব বিবি। নতুন করে বসবাস শুরু করেন গালুয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পুটিয়াখালিতে।
সেখানে একটি খুপড়ি ঘরে কোনোমতে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন তারা। মায়ের ভিক্ষা ও প্রতিবেশীদের সাহায্যে চলতো তাদের সংসার। কিছুদিন পর তার মা জয়নব বিবিও মারা যান। এতিম হয়ে যান বড় বোন শিরিন বেগম ও রিনা।
এরপর সেই খুপড়ি ঘরেই অর্ধাহারে অনাহারে তাদের বসবাস শুরু। ঝড় বৃষ্টি এলেই পানিতে ভরে যেত তাদের ছোট ঘরটি। নিরুপায় হয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হতো দুই বোনকে। রিনা আক্তারের এ দুর্দশা দেখে স্থানীয় কলেজছাত্র মেহেদি হাসান স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করেন তাদের জন্য কিছু করার। তাদের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচারের ব্যবস্থা করেন তিনি।
এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ হাজার টাকা, দুই বান ঢেউটিন দেয়া হয় তাদের। মেরামত করা হয় তাদের সেই ঘরটি। এছাড়াও স্থানীয় অনেকেই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে। সবার সহযোগিতায় এখন তারা ভালো আছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, রিনার বাড়ি থেকে কোনো শব্দ পাই না আমরা। মাঝে মাঝে শুধু কান্নার শব্দ আসে। কথা বলতে পারে না, কিছু শুনে না, চলাফেরা করে অনেক কষ্টে। অনেক কষ্ট করে বেঁচে আছে মেয়েটা।
দুই বোনের অসহায়ত্বের খবর পেয়ে সম্প্রতি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়ে তাদের বাড়িতে হাজির হন পল্লী বিদ্যুতের উপজেলা জুনিয়র প্রকৌশলী আশিকুর রহমানসহ কয়েকজন। পরে ওই বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেন রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎতের সাব জোনাল অফিসের এজিএম রাজন কুমার দাস।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মিটার ফি, ওয়ারিংয়ের তার, লাইট, সুইচ, বোর্ড ও ইলেকট্রিশিয়ান ফি নিজে পরিশোধ করে প্রতিবন্ধী রিনা আক্তারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ঘর আলোকিত করে দেয়া হয়েছে। এসময় ওই এলাকার মৃত ইয়াসিন হাওলাদারের স্ত্রী বিধবা অসহায় সাহা বানুর (৮০) ঘরেও তিনি বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করে দেন। তিনি এভাবে সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ঈশারায় রিনার কাছে এ বিষয়ে অনুভূতি জানতে যাওয়ার চেষ্টা করলে মাথা নেড়ে এ প্রতিবেদককে বোঝান, তিনি এখন ভালো আছেন।
ইউপি সদস্য মো. ফারুক মোল্লা জানান, এতিম রিনা মেয়েটা অনেক ভালো। মেয়েটা একদিকে বাক প্রতিবন্ধী এবং অপরদিকে ডান হাত-পা নেই। খুব অসহায় অবস্থায় আছে। তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হচ্ছে। ভাতা হিসেবে যে কয় টাকা পায় তাতে খাবার খরচই চলে না। একটি ঘরে কষ্ট করে মানবেতর জীবনযাপন করছিলো। আমরা এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা তুলে টিনের একটি ঘর তুলে দিয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক কামাল জানান, এরপূর্বে আমার ইউনিয়নে এমন খবর শুনিনি। আপনার মুখেই প্রথম শুনলাম। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যথাসম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হবে।