ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের পর গৃহবধূর মুখে বিষ ঢেলে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১ জুন নলছিটি পৌরসভার বৈচন্ডী গ্রামে স্বামীর বাড়িতে নির্যাতনের পর গৃহবধূর মুখে বিষ ঢেলে দেয় স্বামী ও তার স্বজনরা।
১৫ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত নুসরাত জাহান ইভা ওই গ্রামের তরিকুল ইসলাম লিংকন হাওলাদারের স্ত্রী ও দক্ষিণ বৈচন্ডী গ্রামের গাজী আক্তার হোসেনের মেয়ে।
গৃহবধূ ইভাকে বিষ দিয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে সোমবার দুপুরে ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই গৃহবধূর বাবা গাজী আকতার হোসেন।
আকতার হোসেন জানান, পাঁচ বছর আগে বৈচন্ডী গ্রামের হাবিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে তরিকুল ইসলাম লিংকন হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয় নুসরাত জাহান ইভার। বিয়ের পর নানা কারণে ইভাকে নির্যাতন করতেন তার স্বামী। ইভার পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছিলেন লিংকন। দিতে না পারায় ইভাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন সইতে না পেরে গত ৩০ মে দুপুরে ইভা অজ্ঞান হয়ে যান। পরে স্বামী তরিকুল ইসলাম লিংকনসহ অন্যরা মিলে ইভার মুখে বিষ ঢেলে দেয়। এ ঘটনার পরও তাকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজন চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নেয়নি। খবর পেয়ে পরদিন তার বাবা এসে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে প্রথমে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে চিকিৎসা না পাওয়ায় তার শরীরে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে তার বেঁচে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। দীর্ঘ ১৫ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান ইভা। ইভা আক্তারের মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়লে তার স্বামী লিংকন হাওলাদারসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ইভার বাবা গাজী আক্তার হোসেন বলেন, ইভার মৃত্যুর পর স্বামী লিংকনসহ তার স্বজনদের আসামি করে নলছিটি থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। মামলা নেয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন ওসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নলছিটি থানা পুলিশের ওসি মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গৃহবধূ ইভা বিষপানের তিনদিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি হলে তাকে নিউমোনিয়া রোগী হিসেবে চিকিৎসক তালিকাভুক্ত করে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মরদেহের ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসতে ১০-১২ দিন সময় লাগবে। রিপোর্ট এলে তখন মামলা নেয়া হবে।