প্রতি শনিবার হাসপাতালে রোগী দেখেন প্রধানমন্ত্রী, করেন অপারেশনও

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশ চালানোর শত ব্যস্ততা। এরপরও সপ্তাহে একটি দিন বের করেন জনগণকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য। প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে তিনি নিজ দেশের হাসপাতালে যান। শুরু করেন চিকিৎসা সেবা। তিনি হলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, যিনি পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে।

তার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার তিনি ছুটে যান দেশটির ন্যাশনাল রেফারেল হাসপাতালে। গায়ে জড়িয়ে নেন এপ্রন। পঞ্চাশ বছর বয়সী এই মানুষটি হাতে তুলে নেন স্ক্যালপেল। সারেন কোনও না কোনও রোগীর অস্ত্রোপচারও।

হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীকে দেখে ভুটানের জনগণ চোখ কপালে তোলে না। কারণ এতে তারা অভ্যস্ত।

ভুটানের রাজতন্ত্রের সমাপ্তি হয় ২০০৮ সালে। ২০১৮ সালে সাড়ে সাত লাখ মানুষের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হন শেরিং।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন শেরিং। তখন তিনি বলছিলেন, ভালো ডাক্তার হতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাদের মন জয় করতে হবে। মানবিক হতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ আছে ডাক্তারদের। শুধু চিকিৎসা সেবা নয় সামাজিক-রাজনৈতিক অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের অবদান রাখার সুযোগ আছে।

লোটে শেরিং তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছি। কিন্তু আমার পেশাকে ছাড়তে পারিনি। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি চাকরি না করে, বিদেশে না গিয়ে ভুটানের মানুষকে নিয়ে ভেবেছি। তাদেরকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। তাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। তাই আজ আমি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী হলেও, ডাক্তারি করাটা আমার কাজ। এ কাজ এতই ভালো লাগার, যে এ কাজ আমার অবসর সময়ের সঙ্গী। কেউ অবসরে গলফ খেলে, কেউ শিকার করে, আর আমি সার্জারি করি। তাই আমার ছুটির দিনটা আমি হাসপাতালেই কাটাই।

১৯৯১ সালের নভেম্বরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়ে এসেছিলেন লোটে শেরিং। এরপর এমবিবিএস পাস করে জেনারেল সার্জারি নিয়ে লোটে শেরিং এফসিপিএস করেছিলেন ঢাকাতেই।

ময়মনসিংহ মেডিকেলের পাশাপাশি কিছুদিন হাতে কলমে কাজ করেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজেও।

এরপর ২০০২ সালে দেশে ফিরে কয়েক বছর চাকরির পর রাজনীতিতে যুক্ত হন বন্ধু টান্ডি দর্জির প্রতিষ্ঠিত দলে যোগ দেয়ার মাধ্যমে। দর্জি বর্তমানে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তবে তিনি লোটে শেরিংয়ের মতো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকেই এমবিবিএস করেন।

২০১৩ সালের নির্বাচনে তাদের দল হেরে গেলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশটির ক্ষমতায় যায় তাদের দল ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন লোটে শেরিং।