আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি ফোরাম- এটমএক্সপো ২০১৯ এ বিশেষজ্ঞদের অভিমত
প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যখন বিশ্বের সকল দেশ গ্রীণ হাউজ গ্যাস
নিঃসরণ কমিয়ে আনতে সচেষ্ট তখন রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এটমএক্সপো ২০১৯ এ অংশগ্রহণকারী
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার অপরিহার্য্য হয়ে
দাঁড়িয়েছে।
রাশিয়ার অবকাশসহ সোচিতে গত ১৫ ও ১৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ১১তম
আন্তর্জাতিক ফোরাম এটমএক্সপোর এবছরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘নিউক্লিয়ার ফর বেটার
লাইফ’। ফোরামটির আয়োজন করছে রুশ রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রসাটম।
দুই দিন ব্যাপী ফোরামটিতে বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশের ৩,৬০০ এর অধিক প্রতিনিধি
অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি
ইয়াফেস ওসমান।
এবারের ফোরামে অংশগ্রহণকারীরা পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিষদ আলোচনা করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে পরমাণু প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে চিকিৎসা শাস্ত্র, কৃষি খাত, মহাকাশ ও মেরু
অঞ্চল গবেষণা এবং অর্থনীতির এনার্জি ভিত্তি সুদৃঢ়করনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন
করবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে রসাটমের মহা-পরিচালক আলেক্সি লিখাচোভ বলেন,
“জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচির সকল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে পরমাণুর শক্তিপূর্ণ
ব্যবহার ওতপ্রতোভাবে জড়িত। জীবনমান উন্নয়ন, সমৃদ্ধি অর্জন এবং পরিবেশের প্রতি
যুক্তিযুক্ত আচরণের ক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন কর্মকা-ের অবিচ্ছদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরমাণু
প্রযুক্তি।”
এশিয়ার দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশসমূহ বিশেষ করে চীন এবং ভারতে পারমাণবিক শক্তির
ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নির্বাহী অফিসের ফার্স্ট ডেপুটি
চীফ অব স্টাফ এবং রসাটম রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশনের সুপারভাইজরি বোর্ডের
চেয়ারম্যান সের্গেই কিরিয়েনকা তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, “ক্রমান্বয়ে নতুন নতুন অনেক দেশ
এটা উপলব্ধি করতে পারছে যে পরমাণু প্রযুক্তি বর্তমানে অতি আবশ্যকীয় একটি বিষয়। এটা
স্বীকার করতেই হবে যে মানব জাতির টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই প্রযুক্তির কোন
বিকল্প নেই।”
আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বে
বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা ১১০ কোটি এবং ২৯০ কোটি লোকের ক্লীন রান্না
সুবিধা নেই (এর অর্থ হচ্ছে এমন কোন ব্যবস্থা নেই যাতে জ্বালানী কাঠ ব্যবহৃত হয় না)।
বিশেষজ্ঞদের মতে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই বিশাল জনগণকে ক্লীন এনার্জি সুবিধার
আওতায় আনার সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করা সম্ভব।
নিউক্লিয়ার এনার্জি এজেন্সির মহাপরিচালক উইলিয়াম ডি. ম্যাগউড এর মতে, “নবায়ন
যোগ্য শক্তি প্রযুক্তির সমপূরক হচ্ছে পরমাণু শক্তি, যা একই সঙ্গে এই প্রযুক্তির সবিরাম উৎপাদন
ঝুঁকি কমিয়ে আনা ছাড়াও অধিকতর নিশ্চিত এবং কার্বন বিহীন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা তৈরিতে
সহয়তা করে। বর্তমানের চ্যালেঞ্জিং মার্কেটে পরমাণু শক্তির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি এবং
ভবিষ্যতের টেকসই এনার্জি মিক্সে যাতে অবদান রাখতে সক্ষম হয় সে জন্য এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে
নতুন নতুন উদ্ভাবন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।”
টেকসই উন্নয়নে পরমাণু শক্তির ভূমিকা বিবেচনায় রেখে এই ক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগের
আহ্বান জানান ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার এসোসিয়েশনের মহাপরিচালক অ্যাগনেটা রাইজিং।
তিনি বলেন, “২০১৮ সালে কার্বন নিঃসরণের পরিমান সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এটা এমন
সময় ঘটেছে যখন সর্বশেষ আইপিসিসি (ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ)
প্রতিবেদনে অনতিবিলম্বে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, জীবাশ্ম জালানীর বিকল্প উৎসে বিশেষ করে
পরমাণু শক্তিতে টেকসই বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।”
আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সি পরমাণু শক্তির জন্য স্পষ্ট এবং অবাহত সমর্থন প্রদানকারী
নীতিমালা প্রণয়নের আহবান জানিয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে অন্যান্য এনার্জি উৎসের
মতো পরমাণু শক্তির জন্যও ক্লীন এনার্জি ইনসেনটিভ।