রমজান ও গ্রীষ্ম মৌসুম সামনে রেখে আগামী ৫ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আশা করছে, চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ তারা এবার সরবরাহ করতে পারবে। বৃহস্পতিবার রমজান এবং গ্রীষ্মের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন দাবি করে পিডিবি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি রমজানে বিদ্যুতের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন জনগণ। বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি সঠিক হলে এবারের রমজানে লোডশেডিংমুক্ত বিদ্যুৎ সেবা ভোগ করবে দেশবাসী।
বৈঠকে জানানো হয়, গত বছর রমজানে ১৬ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল ১০ হাজার ৯৫৮ মেগাওয়াট। চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করছে পিডিবি।
এর আগে ২০১৭, ২০১৬ এবং ২০১৫-তেও চাহিদার পূর্ণ উৎপাদনের তথ্য দিচ্ছে সরকারি সংস্থাটি। এমনটি হলে প্রতি রমজানেই লোডশেডিংমুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ওই বছরগুলো লোডশেডিংমুক্ত ছিল না। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় জনগণ ছিল অতিষ্ঠ। ফলে এবার রমজানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ কতটুকু লোডশেডিংমুক্ত থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় অনেক ভালো। তবে সঞ্চালন এবং বিতরণে কিছু সমস্যা থাকায় বিদ্যুৎ মাঝে মধ্যে গেলেও তা লোডশেডিং না, এটা বিদ্যুৎ বিভ্রাট। উন্নয়ন কাজের জন্যও কখনও কখনও বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হচ্ছে, যা মেনে নিতে হবে।
বর্তমানে দেশের বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৬৭৯ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ বাদে)। গ্রীষ্মের মধ্যে আরও ৮৮৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হবে ১৮ হাজার ৫৬৪ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা মাত্র ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় দেশে ৬ হাজার ৬৪ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর পরও লোডশেডিং হওয়াকে দুঃখজনক হিসেবেই মন্তব্য করেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যবসায়ী।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় (পিক আওয়ারে) বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় এমন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। পিক আওয়ারে হঠাৎ করে প্রথম ২০ থেকে ২৫ মিনিট চাহিদা এতটা বেড়ে যায়, যা পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয়। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সন্ধ্যায় বেশি বিদ্যুৎ প্রয়োজন এমন সরঞ্জাম ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান সচিব।
রমজানে দোকানে বাড়তি আলো না জ্বালানো এবং ইফতার ও সেহরির সময় বিপণিবিতান এবং দোকানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
বৈঠকের শুরুতে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে ৫০ পাউন্ড ওজনের একটি কেক কাটা হয়। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী এবং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন কেক কাটেন।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ও ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।