হাত নেই, পায়েই ভরসা রাখছেন বিউটি

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

দুই হাত না থাকার পাশাপাশি অজুহাতটাও ছিল না বিউটির। আর তাই থেমে থাকেন নি বিউটি আক্তার। দুই হাত নেই, কিন্তু পা তো আছে! সেই পায়ে ভর করে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন বিউটি।

জানা যায়, জন্ম থেকে তার দুই হাত নেই। এই অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। প্রাথমিকের গণ্ডি পেড়িয়ে মাধ্যমিক। এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন বিউটি। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই মেয়েটি।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান (জেকে) কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে বেঞ্চের ওপর বসে পা দিয়ে লিখছেন তিনি। বিউটি পড়াশোনা করছেন দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজে।

বিউটি আক্তার জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের বায়েজিদ প্রামাণিকের মেয়ে। তারা এক ভাই এক বোন। বড় ভাই বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে অনার্সে পড়ছেন।

হাত না থাকায় ডান পায়ের আঙুলে কলম ধরে পরীক্ষার খাতায় লিখছেন বিউটি। তার লেখা সুন্দর। পরীক্ষা শেষে কক্ষ থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে বের হলে কথা হয় বিউটির সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ক্ষেতলাল উপজেলার আখলাক শিবপুর শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে পাশ করেন। তারপর ভর্তি হন দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে। দুইটি পত্রের পরীক্ষা ভালো দিয়েছেন। তার ইচ্ছে বড় হয়ে চিকিৎসক হবেন। নিজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন।

বিউটির বাবা বায়েজিদ প্রামাণিক বলেন, জন্ম থেকেই বিউটির দুইটি হাত নেই। তাকে নিয়ে প্রথমে খুব কষ্ট হয়েছিল। বিউটির ইচ্ছায় তাকে পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছি। সে যেভাবে চলতে চায় আমরা সেভাবে সহযোগিতা করছি। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি সে খুব মনোযোগী।

জে. কে কলেজের কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ বলেন, শুরুতেই তার অবস্থা জানতে পেরে আলাদা কক্ষে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হলেও সহপাঠীদের সঙ্গে পরীক্ষা দেয় বিউটি। প্রতিবন্ধীদের অতিরিক্ত সময় দেওয়ার বিষয়ে ইনভিজিলেটরদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। দুইটি পরীক্ষায় সে অতিরিক্ত সময় নেয়নি।

দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল হক জানান, বিউটি আক্তার প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ক্লাস করতো। ক্লাস পরীক্ষায় ফলাফল ছিল সন্তোষজনক। মেধাবী বিউটি আক্তার এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো করবে বলে তিনি আশাবাদী।