বরিশাল নগরীতে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১২টার পরে গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। তা ছাড়া সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগও পানিও সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে পানি নিয়ে ভোগান্তি রয়েছে নগরবাসী।
সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ বলছে, অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে অধিকাংশ বাড়ির গভীর নলকুপ দিয়ে এখন আর পানি উঠছে না।
এমতাবস্থায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পানি বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিদিন শহরে ৫ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানির প্রয়োজন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন মাত্র ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারছে। যার মধ্যে কীর্তনখোলা নদীর তীর ও রুপাতলী এলাকায় শতকোটি টাকায় নির্মিত ওয়াটার ‘ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ থেকে অসছে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার। এ ছাড়া শহরের ৮টি পানির পাম্প থেকে তুলে সরবরাহ করা হচ্ছে ৬ লাখ লিটার।
সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শহর এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি মিলে সাড়ে ১৫ হাজার গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। এই নলক‚প থেকে চাহিদার বাকি অংশটুকু অর্থাৎ চার কোটি লিটার পানি তোলা হচ্ছে।
তবে শহরের ৩০ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাথে আলাপচারিতায় নিশ্চিত হওয়া গেছে অধিকাংশ নলকুপ থেকে পানি না ওঠার বিষয়টি।
বিশেষ করে নগরীর হাসপাতাল রোড, আমানতগঞ্জ, নথুল্লাবাদ, কাউনিয়া, রূপাতলী, সদর রোড, প্যারারা রোড, কলেজ রোড, বটতলা, আলেকান্দা, বগুড়া রোড ও ভাটিখানাসহ অধিকাংশ এলাকার বাড়ির গভীর নলকূপ থেকে দিনের বেলা পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ নলকূপের ভেতর অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করেছেন।
নগরীর কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা শহীদুল্লাহ সুমন জানিয়েছেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে দিনের বেলা নলকূপে পানি ওঠে না। অনেকটা ভোগান্তি নিয়ে গভীর রাতে অথবা ভোররাতে পানি তুলতে হয়। নথুল্লাবাদ এলাকার বাসিন্দা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পাশের বাড়ির মালিক নলক‚পের ভেতর সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর ফলে তাদের নলকূপ থেকে পানি ওঠে না।’
সদর রোড এলাকার বাসিন্দা হাসান কবির জানান, সিটি কলেজের মধ্যে কর্পোরেশনের অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন গভীর নলকূপ বসানো আছে। ওই মেশিন চালু হলে সদর রোডসহ আশপাশের কেউ পানি পায় না।
প্যারারা রোডের বাসিন্দা আনোরুয়াল হক তারিন বলেন, গভীর নলকূপ বসানোর পরও পানির সংকট তীব্র ছিল। কিন্তু সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপনের পর পানি পাওয়া যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, কোন নির্দিষ্ট এলাকায় গভীর নলকূপের সংখ্যা বেশি হলে গরমের মৌসুমে পানির সংকট তীব্র হয়। তাছাড়া বেশিমাত্রায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করলে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে খাল-পুকুর এবং নদীর পানি ব্যবহার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সিটি করপোরেশনের পানি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর আগের চেয়ে ৩০ ফুট নেমে গেছে। বাসাবাড়িতে বর্তমানে অনেকে সাবমার্সিবল পাম্প ব্যবহার করায় আশপাশের গ্রাহকেরা পানি পাচ্ছেন না।
এই বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। মেয়র সেরনিবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পানির চাহিদা মেটাতে আরও পাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্প আকারে তা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রকল্প পাস ও বরাদ্দ পাওয়া গেলে পানির সংকট আর থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।’