গলাচিপার উপকূলীয় এলাকায় কাঁকড়া চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু নেই প্রয়োজনীয় সরকারি উদ্যোগ। তবুও অল্প বিনিয়োগ ও ক্ষুদ্র আকারের পুকুরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ অঞ্চলে কাঁকড়ার ফ্যাটেনিং (একটি নির্দিষ্ট জলাশয়ে অপরিপক্ব কাঁকড়াকে পরিপক্ব করে বাজারজাত করা) পদ্ধতি অধিকতর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে উদ্যোগ নিলে এতে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অপরদিকে বিদেশে কাঁকড়া রফতানি করে বিস্তর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
বঙ্গোপসাগর অধ্যুষিত গলাচিপা উপজেলার ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ তটরেখা ও তটরেখার ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ৩০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে যেখানে প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়া উৎপাদন হয়ে থাকে। কাঁকড়া চাষে প্রধান উপাদান লবণ পানি। উৎপাদনের জন্য লবণাক্ততার মাত্রা ১৫ থেকে ৩০ পিপিটি এবং পানির তাপমাত্রা ২২ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা প্রয়োজন।
এ এলাকার পানিতে মার্চ থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিমাণ তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা বিরাজ করে। চরমোন্তাজ, চরবাংলা, চররুস্তুম, চরআন্ডা, চরতাপসী, সোনারচর, চরমেছের, চরহেয়ার, জাহাজমারা, চরআশাবাড়িয়া, চরকানকুনি, মাদারবুনিয়া, চরকাউখালী, চরলতা, চরগঙ্গা, চরলক্ষ্মী, চরআগস্তি, চরবনানীসহ গলাচিপায় শতাধিক চর রয়েছে। যেগুলোর প্রত্যেকটিতে বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ করা সম্ভব বলে মনে করছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক। বিচ্ছিন্ন ও অপরিকল্পিভাবে হলেও গলাচিপা উপকূলীয় এলাকায় বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে কাঁকড়ার চাষ।
চরমোস্তাজের সুধান চন্দ্র শীল ও চরলক্ষ্মী গ্রামের মোশারেফ সর্দার ছোট আয়তনের দু’টি পুকুরে কাঁকড়া চাষ করে ৬৮ হাজার টাকা লাভ করেছেন। তারা এ বছর আরও একটি করে পুকুর লিজ নিয়ে কাঁকড়া চাষ সম্প্রসারণ করেছেন। মোশারেফ সর্দার জানান, কাঁকড়া চাষে বেশি জমি ও বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। উপযুক্ত পরিচর্যা এবং পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হলে প্রতি হেক্টরে দুই থেকে তিন টন কাঁকড়া উৎপাদন করা সম্ভব।
চরমোন্তাজ মৎস্য ডিপোর মালিক আজাদ সাথী জানান, প্রতিবছর গলাচিপার উপকূলীয় অঞ্চলে চাষকৃত এবং প্রাকৃতিক উৎস থেকে একশ’ থেকে সোয়াশ’ টন কাঁকড়া আহরিত হয়ে থাকে। স্থানীয় বাজারে এর মূল্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি। মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কাঁকড়া আহরণের মৌসুম। এ সময়ে গলাচিপা উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার লোক কাঁকড়া ধরায় নিয়োজিত হয়। এরা প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়া আহরণ করে থাকে।
এছাড়া বন বিভাগের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে এবং ডুবো চরগুলোতে প্রচুর কাঁকড়া পাওয়া যায়। আহরণকারীরা তিন থেকে চার হাত লম্বা বাঁকানো লোহার শিক কাঁকড়ার গর্তে ঢুকিয়ে দিলে কাঁকড়া আত্মরক্ষার্থে পা দিয়ে শিক আঁকড়ে ধরে। আহরণকারীরা এরপর খুব ধীরে ধীরে গর্ত থেকে শিক বের করে আনতে থাকে। সাথে কাঁকড়াও গর্ত থেকে শিক কামড়ে ধরে বেরিয়ে আসে। এভাবেই সাধারণত কাঁকড়া আহরিত হয়।
১৯৭৭-৭৮ সালে কাঁকড়া রপ্তানি শুরু হয়। তিন বছর বন্ধ থাকার পর ৮২-৮৩ অর্থবছরে ফের রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানির প্রথম দিকের নয়টি বছরে তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশে রপ্তানিকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে কাঁকড়ার স্থান দ্বিতীয়। যে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ কাঁকড়ার চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষের প্রশিক্ষণসহ চাষিদের উৎসাহিতকরণ ও সহযোগিতা করার জন্য আমরা শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।