নিষেধাজ্ঞাতেও বরিশালের নদীতে চলছে মাছ নিধনের মহোৎসব

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও বরিশালের নদীগুলোতে মাছ নিধন রোধ যেন কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতার মধ্যেও থেমে নেই জেলেরা। বিশেষ করে রেণুপোনা থেকে শুরু করে শিকার করছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ঘটনাচক্রে মৎস্য বিভাগ বা প্রশাসনের অভিযানে ২/৪ জেলে আটক পরবর্তী জেল জরিমানা করা হলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া আটক জেলেরাও সামান্য জরিমানা বা ২/১দিন পরে জেল খেটে বেরিয়ে ফের মাছ নিধনে মেতে ওঠেন। ফলে মাছ শিকারের ওপর সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। এমন বাস্তবতায় বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরেও মাছ শিকারের যে আলামত পাওয়া গেছে তাতে সেই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে নগরীর পোর্টরোড বাজারে জাটকা ও বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ বিক্রির চিত্র বলে দিচ্ছে নিষেধাজ্ঞাতেও নদীগুলোতে মাছ নিধনের মহোৎসবের বিষয়টি।

খোঁজ-খবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে- জাটকা নিধন কর্মসূচির আওতায় বরিশাল অঞ্চলের মেঘনা, কালাবদর, মাসকাটা, নয়াভাঙনি ও গজারিয়াসহ ৫ টি নদীতে মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকারের মৎস্য মন্ত্রণালয়। যে নির্দেশনা চলতি মার্চ মাসের ১ তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। অবশ্য মৎস বিভাগের নির্দেশনার আলোকে বরিশালের নদীগুলোতে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বেড়েছে। কিন্তু জেলেদের অপতৎপরতা মোটেও রোহিত করা সম্ভব হয়নি। বরং জেলেরা আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। যার দরুণ সরকারি নিষেধাজ্ঞাতেও মাছ শিকারের যেন মহোৎসব চলমান রয়েছে।’

তবে জেলেদের দাবি- দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারির কারণে সরকার জেলেদের যে চাল বরাদ্দ দিয়েছে তা এখনও হাতে পাননি। এমনকি কবে নাগাদ পাবে তারও কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি বরিশাল মৎস বিভাগ। যে কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও নদীতে নামতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু জেলেদের এই দাবি মেনে নিতে নারাজ বরিশাল জেলা বা বিভাগীয় মৎস্য অফিস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এক্ষেত্রে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমানের ভাষ্য হচ্ছে- ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস সরকার মাছ শিকারের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বাস্তবায়নে কাজ চলছে। বিশেষ করে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোস্টগার্ড পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ধারবাহিক অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে গত ৪ দিনের অভিযানে বরিশাল জেলায় ১০ জেলে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ৫০ হাজার মিটার জাল। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সাথে জালগুলো পুড়িয়ে ধংস করা হয়েছে। এছাড়া ৪দিনে ভোলা ও পটুয়াখালীর নদীতেও অভিযানে অর্ধশতাধিক জেলে আটক হয়েছেন। তাদেরকেও জেল জরিমানা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন স্ব স্ব জেলা মৎস্য অফিসার।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা আজিজুল হক জানিয়েছেন- জেলেরা সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মানার কারণে নদীগুলোতে অভিযান বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কোস্টগার্ডও তাদের টহল বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ধারণা হচ্ছে মাছ শিকার এখন অনেক অংশে কমে আসবে। তাছাড়া জেলেদের জন্য সরকারের দেয়া বরাদ্দের চাল ইতিমধ্যে স্ব-স্ব জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে এসেছে। কিন্তু এই চাল বিতরণ করা গেলে জেলেরা মাছ নিধন থেকে বিরত থাকবেন বলে মনে করেন তিনি।’