তথাকথিত দীপু বিতর্ক : আসুন নোংরামি ভাসিয়ে দেই কীর্তনখোলার পবিত্র জলে।।

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

সময়টা আজ আর খেয়াল নেই, তবে কিছু প্রানোচ্ছল-উদ্যমী মুখ মনে আছে। সেই মুখগুলো আজও আমার প্রিয়। বন্ধু সোহেলের ছোট ভাই রাসেল-লতার বিয়েতে রাসেলের বন্ধু ইমরান, সবুজ আর আরেক শাখামৃগ দীপুর সাথে আমার কয়েকদিন নিরন্তর আড্ডা হয়েছিলো। আমি বুঝতে শিখছিলাম সেদিনের দেখা ছেলেগুলো কিভাবে যুবক হয়ে উঠছে। অনেক দিন লেখালেখি করাই হয় না। তবে সাত সকালে ফেসবুকে একটা নোংরা খবর দেখে লিখতে বাধ্য হলাম। ধন্যবাদ দীপু, তবু তোকে উপলক্ষ করে আমাকে আবার লিখতে হলো।

দীপু-আমার কাছে এখনও সেই ছোটবেলার দীপু, ওকে দেখলে সবসময় আমার আদর করতে ইচ্ছে করতো। পিচ্চি দীপু-এখন বড় হয়েছে, স্টাইল করে দাড়িও রাখে। দুটো উজ্জ্বল মেয়ের বাবা-কিন্তু আমার কাছে ও এখনও ছোট বেলার দীপু। ওর ছোটবেলা থেকেই ওকে চিনি। ওর বাবা ছিলেন বিআইডব্লউটিসির কর্মকর্তা। খালু এবং খালাম্মার সাথেও আমার নিবিড় সম্পর্ক ছিলো। দীপুর একটা বড় ভাই ছিলো-এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। সে সময় এই পরিবার খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো। দীপু আমার মতো অনেকেরই ন্যাওটা ছিলো। আমার বই পড়ার একটা বদভ্যাস ছিলো আর এই কারনে একটা ছোট লাইব্রেরীও ছিলো বরিশালে আমার ছোট্ট বাসায়। দীপু আমার কাছ থেকে বই নিতো পড়ার জন্য। ও যখন আমার কাছ থেকে আরজ আলী মাতুব্বর সমগ্র নিয়ে পড়েছে, তখন ওর বয়সী অনেকেই বরিশালের এই প্রাতঃস্মরণীয় মানুষটি সম্পর্কে কমই জানতো।

শযতানটা আরজ আলী রচনা সমগ্রের দুটো খন্ড মেরে দিয়েছে!! বহু তাগাদা দিয়েও ফেরত আনতে পারিনি। ও যখন ব্রজমোহন কলেজের ছাত্র ছিলো তখন নাটক করতো। ব্রজমোহন থিয়েটার নামে যে সংগঠন ছিলো ওই কলেজের, তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো। আমি যদি ভুল না করি ব্রজমোহন থিয়েটারের সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলো দীপু। আমি বরিশালে দীর্ঘদিন দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার পদে কাজ করেছি। অনেকেই আমাকে চেনেন-এখন অনেকে নাও চিনতে পারেন। তো বরিশালের সকল শুভকাজে আমার অংশগ্রহন ছিলো। প্রতিবেদন করেছি, আন্দোলন গড়ে তুলেছি। অনেক ইস্যুতে কাজ করেছি সেটা বরিশালের মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আন্দোলন হোক, পুকুর রক্ষা আন্দোলন হোক কিংবা রাজা রায় বাহাদুর সড়কের বৃক্ষরাজি সংরক্ষণের আন্দোলন হোক।

এমন অনেক আন্দোলনেই পিচ্চি দীপু আমাদের পাশেই ছিলো। হয়তো ওই পিচ্চির কথা এখন অনেকেরই মনে নাই। দীপু একবার আমার বাসায় হাজির। মিলটন ভাই বন্যার্দূগতদের জন্য কিছু একটা করতে হবে। কি করবি? কোথায় যেতে হবে বল? উত্তর না ভাই কারো কাছে হাত পাতবো না। আমি বলি, তাহলে টাকা পাবি কোথায়? দীপুর উত্তর আমরা সদর রোডে মানুষের জুতা পালিশ করে টাকা নেবো। আমি হতবাক !!! কি বলে? আচ্ছা ঠিক আছে করবি। আমি মুগ্ধ বালক। ওর অজান্তেই আমি একটা ছোট্ট রিপোর্ট করি। প্রকাশ হয় জনকন্ঠের সম্ভবত প্রথম বা শেষ পাতায়। অনেকেই স্বেচ্ছায় হাত বাড়ান এই যুবকদের প্রতি।সেই দীপু কি করে শিবির কর্মী হলো? ওদের পরিবারের কেউ এমন দলের সাথে কোন কালে যুক্ত ছিলেন শুনিনি। তবে দীপুর অনেক দুষ্টুমীর মধ্যেই ছোট বেলা থেকেই ও নামাজ পড়ে। এ নিয়ে আমি মাঝে মাঝে ঠাট্টাও করেছি। ওর বিয়ে হয়েছে আমাদের আরেক বন্ধুর বোনের সাথে। সবদিক থেকে ও এতো চেনা-কোনভাবেই শিবির সংশ্লিষ্টতা দেখতে পাই না।

মোসাদ তো আরো দূরের কথা। সংবাদটি যিনি লিখেছেন-তার পড়াশোনায় যথেষ্ট ঘাটতি আছে বলে আমার বিশ্বাস। কেননা মোসাদ হচ্ছে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থার নাম, কোন আন্তর্জাতিক ছাত্র সংগঠনের নাম নয়। যতোদূর মনে পড়ে, বিডিএস এর পরিচালক বাদল ভাই এই উদ্যমী যুবককে নতুন পদ তৈরী করে সেখানে চাকুরী দিয়েছিলেন-নিশ্চিত ওর সুন্দর চেহারা দেখে না। ডেমোক্রেসী ওয়াচ নিয়ে কথা- সেই প্রতিষ্ঠানও ও ছেড়েছে ৭/৮ বছর আগে। সেখানে চাকুরীর পেছনেও আমার কিঞ্চিত হাত ছিলো। তালেয়া রেহমানের প্রতিষ্ঠনে চাকুরী করা কিভাবে অপরাধ বুঝতে পারিনি? আমরা যদি আমাদের মিডিয়ার মালিকদের চেহারা দেখি-সবাই নিশ্চিত ধোয়া তুলসী পাতা নয়। তাই বলে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সবাই খারাপ সেটা কতটা সঠিক? বরিশালের দিকে তাকালেও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই। বরিশালের দুজন সিনিয়রের নাম সংবাদে ব্যবহার হয়েছে-আমি জানি না তাদের জ্ঞাতসারে নাকি অজ্ঞাতে। তাদের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

আমার ধারনা, তারা এমন নোংরা কাজের সারথী হবেন না। তাদের দুজনকেই আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। বরিশালের রাজাকার কারা? কারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে রাজাকারদের চামচামি করেন-আমি ভালভাবে জানি। বরিশালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকেই কথা বলেন কিন্তু গবেষনার কাজটা মানবদার নেতৃত্বে আমরা গুটি কয়েক মানুষ করেছিলাম। ফলে কোন মিডিয়ার মালিককে মুক্তিযোদ্ধারা কেন ল কলেজের পুকুরে চুবিয়েছিলেন-সে রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে। আর তার কাছে কারা কারা যান কেন যান -সেটাও আমি জানি। দীপুর মূল সমস্যাটা আমি ধরতে পেরেছি। দীপু কাজ করে। আমি তার কাজের সমর্থক। এই সব যুবকেরা আছে বলেই আমার এবং আমাদের প্রিয় বরিশাল এখনো সবুজ। এই যুবকেরা আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি বলতে পারি। এই যুবকেরা আছে বলেই এই ভিনদেশে থেকেও বরিশালের জন্য মন পোড়ে।

মনে রাখতে হবে আমরা যারা কাজ করেছিলাম একদা তাদেরকে নতুনদের জন্য পথ ছেড়ে দিতে হবে। নতুনরা সামনে এলেই আমার বা আমাদের কাজের সমৃদ্ধি ঘটবে। আসুন না আমরা নোংরামি ভাসিয়ে দেই কীর্তনখোলার পবিত্র জলে। ভালবেসে মানুষ হই চেস্টা করি দীপুদের সামনে এগিয়ে দিতে। পূনশ্চ: বরিশালের সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে এই ভার্চুয়াল আন্দোলনটি যখন শুরু হয়-দীপুই আমাকে সেখানকার সেখানকার আমন্ত্রন পাঠিয়েছিলো।