জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দুই মামলায় আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল ও তাঁর স্ত্রী সোমা আলম রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার কমিশন এ অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয়।
দুদকের উপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিগগিরই বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।
দুদক জানিয়েছে, লুৎফর রহমান বাদলের বিরুদ্ধে ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ২৯০ এবং সোমা আলম রহমানের বিরুদ্ধে ৯২ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার ৩৭২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৯ মে সংস্থার উপপরিচালক শেখ আবদুস সালাম বাদী হয়ে লুৎফর রহমান বাদল ও তাঁর স্ত্রী সোমা আলমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় দুটি আলাদা মামলা করেন। মামলার তদন্ত করেন উপরিচালক মোশারফ হোসেইন মৃধা। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে কমিশন অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমা আলম রহমান দুদকে জমা দেওয়া তাঁর সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ৫১ লাখ ৫৩ হাজার ২২২ টাকার স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। অস্থাবর সম্পদের দাম দেখিয়েছেন ১৩২ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭৫ টাকা। তদন্তে তাঁর স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ২২২ টাকার। অন্যদিকে অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় ১৩২ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭৫ টাকার। এ ক্ষেত্রে সোমা আলম ২ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার টাকার সম্পদ অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ ছাড়া সোমা আলমের সম্পদের উৎস পর্যালোচনা করতে গিয়ে ৯২ কোটি ৮২ লাখ ৮২ হাজার ৩৭২ সম্পদের উৎস পাওয়া যায়নি। লুৎফর রহমান বাদল দুদকে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ২ হাজার ৭১৫ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১১৪ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ৬৮১ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। কিন্তু তদন্তে তাঁর ১৫ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১১৪ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ৬৮১ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। তবে তদন্তে ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ২৯০ টাকা আয়ের কোনো উৎস পাওয়া যায়নি।
এর আগে আদলতের আদেশে বাদল এবং তাঁর স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করে দুদক। দুদকের তথ্যমতে, এই সম্পদের দলিলমূল্য প্রায় ২৫৩ কোটি টাকা। তবে এর বাজারমূল্য অনেক বেশি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
দুদক জানিয়েছে, দণ্ডবিধির ৩৮৬ ধারা অনুযায়ী, বাদলের ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকা ব্যাংকের জিম্মায় এবং সব স্থাবর- অস্থাবর সম্পদ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে থাকবে। দুদকের নথিতে থাকা তথ্যমতে, বাদলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩০ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৬ টাকা। আর তাঁর স্ত্রী সোমার সম্পদের পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৭ টাকা।
দুদক বলছে, বাদল দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। সেখান থেকেই দেশে থাকা তাঁর সম্পদ বিদেশে স্থানান্তর ও অন্য নামে হস্তান্তরের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। সে কারণে দুদক ওইসব সম্পদ জব্দ করেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুদকের উপপরিচালক মোশারফ হোসাইন মৃধা ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতসহ নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী ও কক্সবাজারের সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে এই দম্পতির সম্পদ জব্দ ও ক্রোক চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বাদল দম্পতি যাতে ওই সম্পদ কোনো প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে বলা হয়। আবেদনে এই ব্যবসায়ী দম্পতির শেয়ার ও ব্যাংকের অর্থ ফ্রিজ (জব্দ) করতে আবেদন করা হয়।
ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বাদলের সব সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেন।
জব্দ করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- লুৎফর রহমানের বনানীর পুরাতন ডিওএইচএসের ৫ নম্বর রোডের ৬৮ নম্বর বাড়ি, বাড়িধারা মডেল টাউনের তিনতলা একটি বাড়ি, ধানমন্ডির রয়েল প্লাজা, বনানীর গলফ হাইটস, ভাটারার বাড়ি এবং কাকরাইল ও রমনার ভূমি।
ফ্রিজ করা অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একক ও যৌথ হিসাব, ওয়েসিস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, সিনক্লিয়ার ফার্মাসিটিক্যালের ১ লাখ টাকার শেয়ার, লতিফ সিকিউরিটিজস লিমিটেডের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, বিসি করপোরেশনের ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, ডায়াপার লিমিটেডের ৬০ লাখ টাকার শেয়ার, বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশনের ১ কোটি টাকার শেয়ার, আল মানার হাসপাতালের ৬৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার, ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৪১ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ারসহ অন্যান্য সম্পদ।