অর্থ পাচারের সত্যতা : রিমান্ডও হতে পারে ক্রিসেন্টের কাদেরের

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বিদেশে মুদ্রা পাচারের অভিযোগে রাজধানীর চকবাজার থানায় মানিলন্ডারিং আইনে করা মামলায় ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের আনোয়ার হোসেন।

আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, প্রাথমিক তদন্তে এম এ কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে কাদেরকে ভবিষ্যতে রিমান্ডে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আদালতের কাছে প্রার্থনা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্তকার্য সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামি কাদেরকে জেল হাজতে আটক রাখতে মর্জি হয়।।

অপরদিকে কাদেরের আইনজীবী আব্দুল মোতালেব জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুনানির সময় কাদেরকে আদালতের হাজতখানা থেকে আদালতে উঠানো হয়নি।

এর আগে বুধবার ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচারের অভিযোগে চকবাজার থানায় মানিলন্ডারিং আইনে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদেরের ও সরকারি ব্যাংকের দুই ডিএমডিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা করা হয়েছে।

তিন মামলায় ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, রিমেক্স ফুটওয়্যার ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ৪২২.৪৬ কোটি টাকা, ৪৮১.২৬ কোটি টাকা ও ১৫.৮৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

তিন মামলায় আসামিরা হলেন- ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনি, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও এমডি লিটুল জাহান (মিরা), জনতা ব্যাংক লিমিটেডের ডিএমডি (সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন জিএম) মো. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি (তৎকালীন জিএম জনতা ব্যাংক লিমিটেড) ফখরুল আলম, জিএম মো. রেজাউল করিম, ডিজিএম কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ, এ কে এম আসাদুজ্জামান, মো. ইকবাল, এজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতাউর রহমান সরকার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বারখাস্ত) মো. খায়রুল আমিন, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মগরেব আলী, প্রিন্সিপাল অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মুহাম্মদ রুহুল আমিন, সিনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সাইদুজ্জাহান, মো. মনিরুজ্জামান ও মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শুল্ক গোয়েন্দা সম্প্রতি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এর মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড, রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লিমিটেড যথাক্রমে ৪২২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ৪৮১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ও ১৫ কোটি ৮৪ লাখসহ মোট ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে। অবৈধ কাজে জড়িত থাকায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও এমডি লিটুল জাহান (মিরা) এবং অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের চেয়ারম্যান এম এ কাদের ও এমডি সুলতানা বেগম মনিসহ ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।