বরিশালের সিটি মেয়র সাদিকের ছোঁয়ায় বদলে যেতে শুরু করেছে নগর ভবন

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

দায়িত্ব গ্রহনের পর ১০০তম দিন শেষ হলো আজ (৩০ জানুয়ারি) বুধবার। ইতিমধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নেয়া নানামূখি পদক্ষেপে বদলে যেতে শুরু করেছে নগর ভবনের অভ্যন্তরীন চিত্র। অনৈতিক কর্মকান্ড পরিহার করে বেশীরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে মনোনিবেশ করতে শুরু করায় বিসিসির সার্বিক সেবার মান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিতকরন কাজ।

নগরভবন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কর্ম পরিষদের সময়ে মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) দু’জনসহ এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে প্রশাসনিক শাখায় ন্যস্ত করা হয়েছে। আরো বেশ কয়েকজনকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহত দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে ওই সূত্র।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। পরবর্তীতে ওই বছরের ২২ অক্টোবর তিনি শপথ গ্রহন ও পরদিন ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহন করেন। দায়িত্ব গ্রহনের পর তিনি বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যে বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সকল অনিয়ম ও দূর্নীতি দূর করতে তিনি কাজ করে যাবেন। এলক্ষ্যে তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহন করেন।

নগর ভবনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন বর্তমান কর্মপরিষদ দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পানি সরবরাহ শাখার উচ্চমান সহকারি আরাফাত হোসেন মনির ও একই শাখার অপর উচ্চমান সহকারি আবু বকর সিদ্দিককে তাদের চলতি দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে বিসিসি’র বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসমা বেগম রুমী, হাট-বাজার শাখার সুপারিনটেনডেন্ট মু.নুরুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারি জাহাঙ্গীর হোসেন, সহকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী, মাহাবুব আলম, সহকারি হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন, ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমান শাহীন, পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক মাহাবুব তালুকদার ও ড্রাইভার শংকর চন্দ্র বনিককে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করে তাদের সকলকে প্রশাসনিক শাখায় ন্যস্ত করা হয়। ওই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন প্রশাসনিক শাখায় হাজিরা প্রদান করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ায় কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক অজানা আতংক বিরাজ করছে। কখন কাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এভাবনায় দিন কাটছে অনেকের। সূত্রমতে দূর্নীতির বিরুদ্ধে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ যে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন তাতে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশ বেকায়দায়ই রয়েছেন। আগে যেকোন কাজের বিনিময়ে নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎকোচ গ্রহন ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। কিন্তু বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহনের পর ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন আর ফাইল আটকে রেখে গ্রাহকদের হয়রানি করার ব্যাপারে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীই সাহস দেখান না।

নাম প্রকাশের শর্তে বেশ কয়েকজন গ্রাহক বলেন, নগর ভবনে গিয়ে এখন বিনা উৎকোচে প্রয়োজনীয় সেবা পাওয়া যায়। অবস্থা এমন হয়েছে এখন বিসিসির কোন স্টাফকে খুশী হয়ে টাকা-পয়সা দিতে চাইলেও তারা তা গ্রহনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, এসকল স্টাফদের অনেকেই আগে অফিস খরচার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতো। বিসিসি’র প্রায় সকল শাখাতেই এধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড চললেও কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হতোনা। ফলে গ্রাহকরা অভিযোগ করাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে যেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বভাবে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের অনেকে যেন ভাল হওয়ার চেষ্টায় নেমেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্পোরেশনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্ত-কর্মচারী এ প্রতিবেদককে জানান, এখন সকলের মাঝে একটা শৃঙ্খলাভাব দেখা যাচ্ছে। আগে যারা নিয়মিত অফিসে না এসে এক সপ্তাহের হাজিরা খাতায় একদিনে স্বাক্ষর করতেন এখন তারাই সকাল ৯টার মধ্যে অফিসে প্রবেশ করেন এবং মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসে উপস্থিত থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রমে অংশ নেন। তারা আরো বলেন, আগে মেয়র থেকে শুরু এখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে অনেক অনৈতিক কাজ করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেককে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকেও অর্থ নেয়া হতো। নিয়োগ বা বদলীর ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানীর গ্রাহক হতে হয়েছে অনেক স্টাফকে। কেউ কেউ অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের একটি অংশ তুলো দিতো প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের হাতে।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ কর্পোরেশনের দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। নগরীর জগদ্বীশ সারস্বত বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সভায় মেয়র প্রায় দেড় হাজার মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরন করেন। ওই দিনের সভায় গনমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলাপচারিতায় মেয়র বলেছিলেন জনগনের অর্থে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হয়।

তাই যেকোন মূল্যে জনগনের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, জনগনকে সেবা দিয়ে বেতন নিতে হবে, যারা মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীর নামে বেতন নিয়ে বাসায় ঘুমিয়ে থাকেন তাদের আর বেতন দেয়া হবেনা। মেয়রের ওই মতবিনিময় সভার পর দৈনিক মজুরি ভিত্তিক সকল কর্মচারীর বেতন দেয়ার জন্য নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়। এক্ষেত্রে মেয়রের বক্তব্য হচ্ছে নগর ভবন থেকে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নগদ অর্থ প্রদান করা হবেনা। যে যার প্রাপ্য তাকে তার সেই প্রাপ্য তার একাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্নীতি প্রতিরোধে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ প্রথমে সকলের বেতন পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন।

সূত্রমতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান সময় পর্যন্ত নিয়মিতদের কোন বেতন বকেয়া নেই। পাশাপাশি দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদেরও বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। এরফলে এখন পূর্বের ন্যায় কেউ নামে বেনামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। বর্তমান এ অবস্থা চলতে থাকলে বিসিসিতে যেমন সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে তেমনি এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো স্বচ্ছতার সাথে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন অনেকেই।