চলতি মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ জন কেলি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন। কে কেলির স্থলাভিষিক্ত হবেন, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ট্রাম্প এই পদে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের বর্তমান চিফ অব স্টাফ নিক আয়ার্সকে চান। সব ঠিকঠাকই ছিল, প্রস্তুতি সেভাবেই এগোচ্ছিল। তবে গতকাল সোমবার জানা গেল, আয়ার্স এই পদে যেতে তিনি আগ্রহী নন। তিনি জর্জিয়ায় নিজ শহরে ফিরে যেতে চান, সেখানে পরিবারকে সময় দিতে চান।
এই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের হাতে সময় আছে সপ্তাহ তিনেক। চিফ অব স্টাফের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এখন কাকে নেওয়া যায়, তা নিয়ে গলদঘর্ম ট্রাম্প। নিক আয়ার্স দায়িত্ব গ্রহণে অস্বীকার করায় ট্রাম্প রীতিমতো অপমানিত হয়েছেন। শুধু ট্রাম্প নন, তাঁর দুই প্রধান উপদেষ্টা মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনারও ব্যাপারটাকে ব্যক্তিগত অপমান বলে ধরে নিয়েছেন। কারণ, নিকের নাম তাঁরাই প্রস্তাব করেছিলেন।
সিএনএন বলছে, এই ঘটনায় ট্রাম্প দারুণ খেপেছেন। তিনি মুখে বলছেন, এই দায়িত্ব নিয়ে আগ্রহী লোকের অভাব নেই। কিন্তু নিক আয়ার্সের মত পরিবর্তন থেকে স্পষ্ট, খুব বেশি লোক নেই, যাঁরা এই পদের জন্য আগ্রহী। হোয়াইট হাউস নিয়ে বই লিখেছেন—এমন এক ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন, অফিসের কাগজ-কলম হাতানোর ইচ্ছা না থাকলে এই চাকরি করবে—এমন কেউ আছে নাকি আবার? অবস্থা এতটা জটিল যে ট্রাম্পকে এখন রীতিমতো হোয়াইট হাউসের দরজায় ‘চাকরি খোলা আছে’—এই নোটিশ ঝোলাতে হতে পারে।
একসময় ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ঠাট্টা করে বলেছিলেন, তিন বছরে দুই-দুইটা চিফ অব স্টাফ বদলাতে হয়েছে তাঁকে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাঁকে এত বেগ পোহাতে হয়েছে কেন। এখন দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের অবস্থা তার চেয়েও ভয়াবহ। কেলি চলে গেলে দুই বছরে ট্রাম্পকে তিনজন চিফ অব স্টাফ নিয়োগ দিতে হবে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন জানিয়েছে, এর আগে আর কোনো প্রেসিডেন্টকে দুই বছরে তিনজন চিফ অব স্টাফ নিতে হয়নি। এটা একটা রেকর্ড।
চিফ অব স্টাফের দায়িত্বটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি হোয়াইট হাউসের প্রধান কর্মসচিব, প্রেসিডেন্টকে খুশি রাখা ছাড়াও তাঁর এজেন্ডা বাস্তবায়নে তিনি প্রধান সমন্বয়কারী। এই কাজে তাঁকে পুরো মন্ত্রিপরিষদের কার্যাবলি নখদর্পণে রাখতে হয়, কংগ্রেসের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে চলতে হয়। প্রেসিডেন্ট কোন আইন পাসের পক্ষে, কোনটার বিপক্ষে—সে কথা তাঁকেই কংগ্রেসের নেতাদের জানাতে হয়। তবে তাঁর প্রধানতম কাজ, প্রেসিডেন্টকে ছোট একটি দড়িতে বেঁধে তাঁর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
শেষ কারণেই কেউ ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ হতে চান না। তাঁকে নিয়মের মধ্যে আটকা রাখা অসম্ভব। তিনি কেবল সব প্রচলিত নিয়মনীতি অগ্রাহ্য করেন, তা-ই নয়, যখন-তখন আইনভঙ্গ করতেও দ্বিধা করেন না। এর ওপরে আছেন ট্রাম্পের টুইটার আসক্তি। ট্রাম্পের মেয়ে ও জামাতাও কোনো নিয়ম মানতে চান না। আরেক সমস্যা হলো যাঁরাই এই হোয়াইট হাউসের শীর্ষ পদে আসীন, দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সবাই আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত নিয়ে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের জালটা এত বিস্তৃত যে ট্রাম্পের আইনজীবীদেরও আইনি ঝামেলা এড়াতে আইনজীবী নিয়োগ করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, নিক আয়ার্সের অনাগ্রহের কারণ, তিনি নিজের নামের সঙ্গে ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউসের ঝামেলা নিজের গায়ে লাগাতে চান না। তাঁর ইচ্ছা জর্জিয়ার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। সেখানে তিনি গভর্নরের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। সে কাজে ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ তাঁর জন্য গলার ফাঁস হয়ে উঠতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা দুটি জানিয়েছে, নিক আয়ার্সের ব্যাপারে ট্রাম্প এতটা নিশ্চিত ছিলেন যে দ্বিতীয় কোনো নাম তিনি বিবেচনায় আনেননি। এখন বাধ্য হয়ে নিজের ঘনিষ্ঠ লোকজনের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। জানা গেছে, নিজ মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্যের নাম তিনি বিবেচনায় রেখেছেন। কিন্তু তাঁদের কেউই এই কাজে আগ্রহী নন। মন্ত্রিসভার বাইরে যাঁর নাম শোনা যাচ্ছে, তিনি হলেন নর্থ ক্যারোলাইনার অতি রক্ষণশীল কংগ্রেসম্যান মার্ক ম্যাডোস। সিএনএন প্রথমে জানিয়েছিল, ম্যাডোস এই কাজ আগ্রহী নন। তবে রাজনীতিবিষয়ক ওয়েবসাইট পলিটিকোকে তিনি বলেছেন, চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পাওয়া খুবই সম্মানের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে নিশ্চয় অনেক যোগ্য নাম আছে। তাঁদের মধ্যে একজন তিনি ঠিকই বেছে নেবেন।