নয়াপল্টনে সংঘর্ষ: বিএনপির ৩৮ জন রিমান্ডে, কারাগারে ২৭

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির ৩৮ জন নেতা-কর্মীকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া একই ঘটনায় গ্রেপ্তার অপর ২৭ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত (সিএমএম) আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। পল্টন থানা-পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ওই ৬৫ জন নেতা-কর্মীকে আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে।

হামলার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, নির্বাচন কমিশনের জারি করা নির্বাচন বিধি অনুযায়ী ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে শো-ডাউন নিষিদ্ধ। অথচ ওই দিন বিএনপি নেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল নিয়ে পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। অপরদিকে নবী উল্লাহ নবী এবং কফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে আরও দুটি মিছিল আসে। এরপর বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ হাজার জনের একটি মিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসে। তাঁরা নয়াপল্টনের ভিআইপি রোড বন্ধ করে দিয়ে মিছিল ও শো-ডাউন করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে।

আদালতকে পুলিশ আরও বলেছে, রাস্তার এক লেন ছেড়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য অনুরোধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি জানানো হয় বিএনপি অফিসে থাকা বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে। বিএনপি অফিসের মাইকের মাধ্যমে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য ঘোষণা চেয়ে অনুরোধ করা হয়। তবে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে আসামিরা বিএনপির অফিস থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে নয়াপল্টনের ভিআইপি রোডের গাড়ির শোরুমের উত্তর পাশের রাস্তায় পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়ে।

রিমান্ড আবেদনে পুলিশ আদালতকে বলেছে, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী, আফরোজা আব্বাস, নবীউল্লাহ নবী, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান ও কফিল উদ্দিনদের প্রত্যক্ষ মদদে এই ঘটনা ঘটে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার জন্য পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে এই হামলা চালানো হয়। পলাতক আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।

অবশ্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে আসামিদের জামিন চান। আদালতকে তাঁরা বলেন, বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেননি। কোনো গাড়িও ভাঙচুর করেনি। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিপুল পরিমাণ লোকের উপস্থিতি দেখে সরকারি মদদে কিছু লোক হেলমেট পরে নাশকতার এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন আদালতকে বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে যখন হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশ করে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ থাকে না। বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে সরকার ষড়যন্ত্র করছে।

নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু। শুনানির সময় আবদুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, রাস্তা বন্ধ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করেনি। নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়েছে। ছাত্রলীগ সেখানে কেন যাবে? বিএনপির নেতা-কর্মীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করেছে তাঁদের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। গ্রেপ্তার করা আসামিদের কয়েকজন বিএনপির প্রার্থী। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমার দেওয়ার জন্য তাঁরা নয়াপল্টনে আসেন। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। হয়রানি করার জন্য এই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের বক্তব্য শোনার পর ৬৫ জন আসামির মধ্যে ৩৮ জনকে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন আদালত। বাকি ২৭ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

এর আগে বিকেল চারটার পর প্রিজন ভ্যানে করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢাকার আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এরপর সন্ধ্যার সময় তাঁদের আদালতে তোলা হয়। দুপুর থেকে গ্রেপ্তার আসামিদের স্বজনেরা আদালতে ভিড় করতে থাকেন। সন্ধ্যার পরও তাঁরা আদালতে চত্বরে দেখা গেছে।