বাংলাদেশ পুলিশে জাতীয় বেতন স্কেলে ‘গ্রেড-৬’-এ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ রয়েছে ৮৯৭টি। নতুন করে আরও ২৫৩ পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত এএসপির সংখ্যা দাঁড়াবে এক হাজার ১৫০টি।
গত ৫ নভেম্বর অর্থবিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব (বর্তমানে সচিব) আব্দুল রউফ তালুকদার বিষয়টি অনুমোদনের জন্য একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে মঞ্জুরিকৃত ২৫৩টি ‘সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার’ পদকে বিলুপ্ত করে অনুরূপ ২৫৩টি ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার’ পদ সৃজনে অর্থ বিভাগের সম্মতির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বিবেচ্য পত্রের সঙ্গে প্রেরিত পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পত্রে উল্লেখ আছে যে, বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বর্তমানে ২৫৩টি ‘সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার’ পদের মঞ্জুরি রয়েছে। যা ১৯৮৩-২০১২ সাল পর্যন্ত একাধিক জিও’র (গভমেন্ট অর্ডার) মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সৃজন করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে এক হাজার ৩৫৪টি সহকারী পুলিশ সুপার পদের মঞ্জুরি রয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার পদে কর্মরত নবম গ্রেডের কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের পর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পদদোন্নতির জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৭ এর প্রযোজ্য শর্তানুযায়ী সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং চাকরির মেয়াদ চার বছর পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের সিলেকশন গ্রেড (জাতীয় বেতন স্কেলের সপ্তম গ্রেড) প্রদান করা হলে তারা ‘সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার’ পদের কর্মকর্তা বলে বিবেচিত হতেন।
পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১১১ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের পদকে সিনিয়র স্কেল অর্থাৎ ২০০৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী ১১০০০-১৭৬৫০ টাকায় (৬ষ্ঠ গ্রেড) উন্নীত করা হয়।
আরও জানানো হয়েছে, চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ- ২০১৫ এর বিধি-৬ মোতাবেক সিলেকশন গ্রেড স্কেল ও উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) পদ্ধতি বিলুপ্তি করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড পদ্ধতি বিলুপ্ত এবং নিয়োগ বিধি না থাকায় বিদ্যমান ২৫৩টি মঞ্জুরিকৃত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পদে পূর্বের মত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপারদের সিনিয়র স্কেল প্রদান করা যাচ্ছে না।
ফলে বর্তমানে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে মঞ্জুরিকৃত ২৫৩টি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপরের পদ শূন্য রয়েছে। এতে করে এটিকে যেমন ২৫৩টি সিনিয়র এএসপি পদ শূন্য থাকায় পুলিশের প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রমে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি পদোন্নতিযোগ্য সহকারী পুলিশ সুপাররা উচ্চতর বেতন স্কেলের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১ এর বিধি ৫ (বি) অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও চাকরিতে যোগদানের পর হতে সন্তোষজনকভাবে পাঁচ বছর চাকরিকাল অতিবাহিত করার পর সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতির জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। ওই বিধি মোতাবেক পুলিশের ৩০ ও ৩১তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে কর্মকর্তারা সব শর্ত পূরণ করে পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর নির্দেশনা অনুযায়ী এবং নিয়োগবিধি না থাকায় যেহেতু বিদ্যমান ২৫৩টি সিনিয়র এএসপি পদে কাউকে পদায়ন করা যাচ্ছে না সেহেতু ওই ২৫৩টি সিনিয়র এএসপিকে চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর ৬ষ্ঠ গ্রেডে (স্কেল ৩৫৫০০-৬৭০১০) ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার’ পদে উন্নীত করা প্রয়োজন।
‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার’ পদে উন্নীতর জন্য বিবেচ্য পত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতিপত্র ও প্রস্তাবটি প্রশাসনিক অনুমোদনের সত্যায়িত কপি দেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিদ্যমান ২৫৩টি ‘সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার’ পদকে বিলুপ্ত করে অনুরূপ ২৫৩টি ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার’ পদ রাজস্ব খাতে স্থায়ীভাবে সৃজনে সম্মতি দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বছরে অতিরিক্ত দুই কোটি ৮৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৬০ টাকা লাগবে বলে জানানো হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশে ৭৫০টি ক্যাডার পদ এবং ৪৯ হাজার ২৫০টি নন-ক্যাডার ও সিভিল পদসহ মোট ৫০ হাজার নতুন পদ সৃজনের বিষয়ে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেন। তা অনুমোদনের প্রেক্ষিতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ৪৯ হাজার ৩১৫টি নতুন পদ সৃজনে অর্থ বিভাগ থেকে সম্মতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাডার পদ ৭৭৪টি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদিত ৭৫০টি ক্যাডার পদের অতিরিক্ত ২৪টি ক্যাডার পদ অনুমোদন দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ অধি শাখা-১ এর উপ-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের ২৩৫ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপারে (এসপি) পদোন্নতি দেয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, ২৩০ জনকে সুপার নিউমারির পদের বিপরীতে এসপি হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে (৫ ও ২৩০ জন) এ পদোন্নতি দেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ৬ নভেম্বর পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে চার অতিরিক্ত আইজিপি ও ১৩ ডিআইজিকে পদোন্নতি দেয়া হয়।