পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবারও দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার চামেলী খাতুন। তার আশা একদিন লাল-সবুজ জার্সি পরে মাঠ মাতাবেন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক পুনর্বাসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ হাসপাতালটি আগে পঙ্গু হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল।
গতকাল বিমানে ওঠার আগে চামেলী বলেন, আমার কথা হয়তো সবাই ভুলেই গিয়েছিলেন। আমিও সেভাবে কাউকে কিছু জানাতে পারিনি। মিডিয়ার কারণে সবাই জানতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী আমার দায়িত্ব নিয়েছেন। এখনই মানসিক সুস্থতা অনুভব করছি। শারীরিক সুস্থতাও হয়তো পেয়ে যাব। সুস্থ হলে দেশের হয়ে আবার খেলতে চাই।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল গনি মোল্লা সমকালকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারা চামেলী খাতুনের চিকিৎসার পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তার জন্য একটি কেবিন প্রস্তুত রাখা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতালে ভর্তির পরপরই কয়েকজন চিকিৎসক তার শারীরিক সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন- চামেলী খাতুনের স্পাইন ও লিম্বে সমস্যা রয়েছে। মেরুদণ্ডের আঘাতটা দীর্ঘদিন ধরে তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন। ক্রিকেট খেলার কারণে তার লিম্বেও সমস্যা রয়েছে। তিনি নিজেও গতকাল রাতে হাসপাতালে গিয়ে চামেলী খাতুনের শারীরিক অবস্থা দেখেন। ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল তার চিকিৎসায় কোনো মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়নি। আজ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। পরিচালক আরও জানান, চামেলী খাতুনের চিকিৎসার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন। তার চিকিৎসায় যা যা করার দরকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা করবে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় একটি বেসরকারি বিমানে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আনা হয় চামেলীকে। তার সঙ্গে মা-বোনসহ পরিবারের তিন সদস্য ঢাকায় এসেছেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের ঢাকা নিয়ে আসেন। গতকাল সকালে চামেলীকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহীর দরগাপাড়ার বাসা থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের এনডিসি আনিসুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চামেলীকে ঢাকা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামেলীর চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুসারে চামেলীকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব না হলে বিদেশে পাঠানো হবে।
২০১১ সালে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রস্তুতি শিবিরে ফিল্ডিং অনুশীলন করতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন চামেলী। পরে আবাহনী মাঠে প্রশিক্ষণের সময়ও আরেক দফা চোট পান। তবে কখনই যথাযথ চিকিৎসার সুযোগ পাননি তিনি। এই চোট তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার প্রায় শেষ করে দেয়। গত কিছুদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। এর পরই গণমাধ্যমে ২০১০ সালের এশিয়া কাপে রৌপ্য পদকজয়ী বাংলাদেশ নারী দলের এ সদস্যের অসুস্থতার খবর জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। তৎক্ষণাৎ তিনি চামেলীর উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ দেন।