প্রজনন মৌসুমের টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বরিশালের মোকামগুলো ইলিশে ভড়ে গেছে। তাও আবার সাগর নয় নদীর ইলিশেরই দখল মোকামজুড়ে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকারে নামে। আর ১২ ঘন্টা পার হতে না হতেই বরিশালে একমাত্র বেসরকারি বৃহৎ মৎস অবতরণ কেন্দ্রে পোর্টরোড ইলিশে ভড়ে গেছে।
বেলা যতো বাড়ছে ততো ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আমদানি বাড়ছে। মাছের আমদানি বাড়ার সাথে সাথে ঝিমিয়ে পড়া অবতরণ কেন্দ্রকে ঘিরে সর্বোত্র কর্মব্যস্ততা দেখা দিয়েছে। মাছবহনসহ বরফকল থেকে শুরু করে প্যাকিং পর্যন্ত শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছে। আবার ইলিশের আমদানি বাড়ার কারণে দরও কিছুটা নিম্নমুখি রয়েছে বলে দাবী করেছে ব্যবসায়ীরা।
মাছ আর মানুষের ভীড়ে বরিশালে নগরের পোর্ট রোডস্থ অবতরণ কেন্দ্রে পা রাখাটাই দ্বায় হলেও এরমধ্যে সোমবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সেখানে কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মোকামেই প্রচুর ইলিশ রয়েছে, পাইকার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি খুচরো ক্রেতাদের ভীড় রয়েছে প্রচুর। অবতরণকেন্দ্র সংলগ্ন খালে ছোট ছোট ট্রলার- নৌকা এমনকি স্পীড বোটে করে স্থানীয় নদীর মাছ আসছে। তবে এরমধ্যে কোন ফিসিং বোট নেই। প্রতিটি নৌযান থেকে বাঁশের সাজি, প্লাষ্টিকের কাটা ড্রাম ও বস্তা বোঝাই করে শ্রমিকরা নামাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।যারমধ্যে ছোট থেকে বড় সবধরনের ইলিশ রয়েছে। তবে অনেক ইলিশের পেটে এখনো ডিম রয়েছে বলে দাবী করেছেন ব্যবসায়ীরা।
মাছগুলো ডাকের/নিলামের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন। প্রতিটি মোকামের ব্যবসায়ীরা প্রচুর পরিমানে মাছ কিনছেন। ক্রয়কৃত ইলিশ গদিতে নিয়ে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন বাহনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারমধ্য দিয়ে জেলেদের পাশাপাশি, বাজার- বরফকল- ট্রান্সপোর্ট পর্যন্ত শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এদিকে পাইকারের সাথে খুচরো ক্রেতারাও মাছের দাম কিছুটা কম থাকায় এ অবতরন কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
মৎস অবতরণ কেন্দ্রর শ্রমিক আলতাফ হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর প্রথমদিনেই যে মাছের চাপ বেড়েছে তা সকলের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। ঝিমিয়ে থাকা পোর্টরোডে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা। এরকম চাপ আরো ২/১ দিন থাকবে বলেও জানান তিনি।
আড়তদার নাছির উদ্দিন খান জানান, এখন পর্যন্ত বরিশালের অবতরণ কেন্দ্রে আনুমানিক ২ হাজার মনের মতো মাছ এসেছে। আর এরসবই নদীর ইলিশ। আমদানি বেশি থাকায় দামও কিছুটা কমে এসেছে। ইলিশের চাপ এরকম আরো ২/১ দিন থাকবে, তবে ১ নভেম্বর থেকে ঝাটকা নিধন বন্ধের কর্মসূচী শুরু হওয়ার পর ইলিশের চাপ কমে যাবে।
ভাই ভাই ফিসের মোঃ কুদ্দুস হাওলাদার জানান, মাছের দাম কম থাকলে আমদানি বেশি হওয়ায় বরফের দাম বেড়েছে। ২৫-৩০ টাকার একঝুড়ি ভাঙ্গা বরফ ৪০-৪৫ টাকা হয়েছে, অর্থাৎ এক ক্যান (পিস) আড়াইশত টাকার বরফ ৩ শত টাকা। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে যদি আজ এ মাছ পাঠানো না সম্ভব হয়, তবে কাল বরফের চাহিদা দ্বিগুন হবে। এক্ষেত্রে বরফ সংকট দেখা দিলে খুলনা থেকেও বরফ আনতে হবে। সংকটে ক্যানপ্রতি বরফের দাম ৪ টাকায় গিয়ে ঠেকতে পারে। তবে রাতের বেলা মাছের ট্রাক চলাচল করতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে জেলা মৎস অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট থাকলেও মাছ বিকল্প ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো সম্ভব হবে। তবে না পাঠাতে পারলে মাছ বরফ দিয়ে সংরক্ষন করবে ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, বর্তমানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারনে যেমন ইলিশের পরিমান বাড়বে, তেমনি ডিমওয়ালা বাকী মাছগুলোও দ্রুত ডিম ছেড়ে দিবে। এতে ভবিষ্যতে ইলিশের পরিমান আরো বাড়বে।
নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম দিনেই ইলিশের পরিমনা সন্তোষজনক জানিয়ে তিনি বলেন ২০০৮ সাল থেকে সরকারের ইলিশ সংরক্ষন পদ্ধতি এবং নিষেধাজ্ঞার কারনে সাগর ও নদ নদীতে ইলিশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতিবছরই বড় বড় সাইজের ইলিশ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সম্মোন্নিত কর্মসূচীর কারণেই এগুলো সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে পাইকার বাজারে, মন প্রতি এলসি সাইজ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ হাজার টাকায়, এলসির নীচের সাইজের ইলিশ (ভ্যালকা) বিক্রি হচ্ছে ১৪-১৫ হাজার টাকায় এবং এর নীচের সাইজ গোটলা বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ হাজার টাকায়। এরথেকে ছোট সাইজের মাছ ৬-৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে মনপ্রতি। এদিকে ১ কেজি সাইজের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩০-৩২ হাজার টাকা এবং দেড়কেজি সাইজের ইলিশ ৪৮-৫০ হাজার টাকা দরে মনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে নিষেধাজ্ঞার পূর্বে মন প্রতি এলসি সাইজ ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৩-২৫ হাজার টাকায়, এলসির নীচের সাইজের ইলিশ (ভ্যালকা) বিক্রি হয়েছে ১৬/১৭ হাজার টাকায় এবং এর নীচের সাইজ গোটলা বিক্রি হয়েছে ১০/১১ হাজার টাকায়। অপরদিকে ১ কেজি সাইজের ইলিশ মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪০/৪১ হাজার টাকা, ১২শ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৪৫ টাকা এবং এর ওপরে দেড়কেজি সাইজের ইলিশ ৬০ হাজার টাকা দরে মনপ্রতি বিক্রি হয়েছে।