‘অসন্তুষ্ট’ বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

দেশের মোবাইল ফোনের গ্রাহকেরা গত ১৩ মাসে ২২২ কোটিবার কথার মাঝে কল কেটে যাওয়া বা কল ড্রপের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গ্রাহকসংখ্যার অনুপাতে প্রতিটি অপারেটরের ক্ষেত্রেই সংখ্যার দিক দিয়ে বড় অঙ্কে কল ড্রপের ঘটনা ঘটেছে। যদিও অপারেটরগুলো বলছে, এটি শুধু অপারেটরের ওপর নির্ভর করে না। এ দেশে কল ড্রপ সীমার মধ্যেই রয়েছে।

কল ড্রপের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রাহক অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। কল ড্রপের প্রকৃত অবস্থা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্য জানাতে বলা হয়েছে।

বিটিআরসির পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস) মো. গোলাম রাজ্জাক স্বাক্ষরিত ওই চিঠি আজ সোমবার মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক জাকির খান  চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কল ড্রপ-সংক্রান্ত অভিযোগ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, কল ড্রপের পরিমাণ বিটিআরসির নির্ধারিত সীমার মধ্যে (২ শতাংশ) থাকা আবশ্যক। অপারেটরদের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কল ড্রপ নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে দাবি করলেও গ্রাহক পর্যায়ে অনেক অভিযোগ আছে। এ ছাড়া কোনো কোনো অপারেটরের নেটওয়ার্কে একটি কলে চার থেকে পাঁচবার কল ড্রপ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ কল ড্রপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জাতীয় সংসদের পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোনে একবার কথা শেষ করতে চার-পাঁচবার কল করতে হয়। এটা হতে পারে না। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কল ড্রপের ঘটনা যাতে না ঘটে, বাণিজ্যমন্ত্রী সে জন্য টেলিযোগাযোগমন্ত্রীকে গ্রামীণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইদানীং দেখা যায় আমরা যারা গ্রামীণফোন ব্যবহার করি, তাদের প্রতিটি কলে কল ড্রপ হয়। একেকটি কলে ৩, ৪, ৫ বারও ড্রপ হয়।’
এদিকে এ চিঠির পাশাপাশি বিটিআরসি সবগুলো অপারেটরের গত এক বছরের কল ড্রপের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, কল ড্রপে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে গ্রাহকসংখ্যায় শীর্ষে থাকা মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। গত এক বছরে ১০৩ কোটি ৪৩ লাখবার কল ড্রপ হয়েছে তাদের। একই সময়ে রবির কল ড্রপ হয়েছে ৭৬ কোটি ১৮ লাখ বার। অপারেটরটি গ্রাহকসংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

বিটিআরসির তথ্য অনুসারে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা ৭ কোটি ৭ লাখ। অন্যদিকে রবির রয়েছে ৪ কোটি ৬১ লাখ গ্রাহক।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলালিংকের কল ড্রপ হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ আর টেলিটকের আনুমানিক ৬ কোটি। বাংলালিংকের গ্রাহক ৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের রয়েছে ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার গ্রাহক।

২০১৬ সালের ৩০ জুন বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরগুলো কল ড্রপের বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয়। এতে বলা হয়, একের অধিক কল ড্রপ হলে প্রতিবারের জন্য এক মিনিট করে গ্রাহককে ফেরত দিতে হবে এবং তা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে জানাতে হবে। বিটিআরসির হিসাব বলছে, গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ২৭ কোটি ৭৭ লাখ বার একের অধিক কল ড্রপের (এক দিনে) ঘটনা ঘটেছে। রবির ক্ষেত্রে তা ২৪ কোটি ৪৭ লাখ এবং বাংলালিংকের ক্ষেত্রে ১৭ কোটি ১৪ লাখ। আলোচ্য সময়ে গ্রামীণফোন ১০ কোটি ৩০ লাখ, রবি ৬ কোটি ৮২ লাখ ও বাংলালিংক ৪ কোটি ৯৪ লাখ মিনিট গ্রাহককে ফেরত দিয়েছে বলে দেখা যায় বিটিআরসির হিসাবে।

বিটিআরসি গতকাল অপারেটরগুলোকে যে চিঠি পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়, গ্রাহক স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কল ড্রপের পরিমাণ বিটিআরসি নির্ধারিত ২ শতাংশের মধ্যে থাকা আবশ্যক। চিঠিতে আরও বলা হয়, মাসিক প্রতিবেদনে অপারেটরেরা কল ড্রপের হার নির্ধারিত সীমার মধ্যে আছে বলে দাবি করলেও সম্প্রতি গ্রাহকপর্যায়ে অনেক অভিযোগ আছে। কোনো কোনো অপারেটরের নেটওয়ার্কে একটি কলে ৪-৫ বার কল ড্রপ হয় বলে অভিযোগ রয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়।

গ্রামীণফোন বলছে, গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কে কলড্রপের পরিমান সব সময়ই বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনেক নিচে থাকে। গ্রাহকসংখ্যার বিচারে গ্রামীণফোনের কল ড্রপের পরিমাণ অন্যদের তুলনায় অনেক কম রয়েছে।

রবি আজিয়াটার হেড অব করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেন, রবি নেটওয়ার্কে কল ড্রপের পরিমাণ ১ শতাংশের কম, যা বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) নির্ধারিত সীমার মধ্যেই আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কল ড্রপ শুধু অপারেটরদের ওপর নির্ভর করে না। এর সঙ্গে তরঙ্গের স্বল্পতা, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের দুর্বলতা, ইন্টারকানেকশন, গ্রাহকের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মানের মতো অনেকগুলো বিষয় ও পক্ষ জড়িত।