থ্যাংকলেস জব! খেলার জগতে শব্দটা ব্যবহার করা হয় আম্পায়ার বা রেফারিদের জন্য। যে কাজ বা গুরুদায়িত্ব তারা পালন করেন, সেটি ঠিকঠাকভাবে হওয়ার পর ‘সাধুবাদ’ তাদের কপালে জোটে না; কিন্তু সিদ্ধান্তে সামান্য এদিক-ওদিক হলেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায় চারদিকে। ধন্যবাদ নেই, নিন্দাবাদ আছে- এটিই যেন সারকথা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিন ঠিক এমনটা বলতে চাইলেন মাশরাফি বিন মুর্তজাও। বাংলাদেশ অধিনায়কের সরল ভাষ্য, ‘জিতলে সবাই বলবে, এটাই হওয়ার কথা ছিল। হারলে কিন্তু ভিন্ন কথা হবে।’ সেই ‘ভিন্ন কথা’ মানে সমালোচনার পথ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ মিরপুরে জিম্বাবুয়ে মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আট মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে যাওয়া শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর আড়াইটায়।
প্রতিটি সিরিজ বা টুর্নামেন্টের আগমুহূর্তে ‘উত্তাপ’ ছড়ানোর জন্য কিছু না কিছু উপাদান থাকে। সেই উপাদান কখনও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের, কখনও বদলা নেওয়ার, কখনোবা আবার বাইশ গজের বাইরে ঘটা অন্য কিছু। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় পর্যুদস্ত হয়ে ফেরা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রাপ্তিযোগ্য এমন কী লক্ষ্যই বা আছে, দেনা চুকানোরও বা কী? প্রশ্নটা বাতাসে ভাসছে গত ক’দিন ধরেই- খুব বেশি কিছু কি অর্জনের আছে এ সিরিজে? শিরোপা জয়ের টুর্নামেন্ট নয় এটি, প্রতিপক্ষও র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দল নয়। এমনকি বিগত চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে যাদের পঞ্চাশ ওভারিতে জয়ই নেই, তাদের বিপক্ষে আরেকটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে চ্যালেঞ্জটাই বা কোথায়? ‘চ্যালেঞ্জ প্রতি ম্যাচে যেটা থাকে সেটাই। অন্য দলের সঙ্গে যে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে খেলি, গত এশিয়া কাপে যেভাবে খেলেছি, সেটাই থাকবে’- বলছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি।
অবশ্য বিশ্বকাপের সাত মাস আগের এ সিরিজে আরেকটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ আছে। চোটের কারণে এ সিরিজে খেলতে পারছেন না সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। গত বছর দুয়েক ধরে বাংলাদেশ দলের যা নিয়ে শঙ্কা বেশি, সেই ‘সিনিয়ররা না থাকলে কী হবে’ প্রশ্নের জবাব খোঁজার সিরিজ এটি। তামিমের কারণে একটি এবং সাকিবের কারণে দুটি (মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও স্পেশালিস্ট স্পিনার) জায়গা খালি হয়েছে। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশের ব্যাকআপ শক্তি কেমন থাকবে, তার একটি যাচাই হবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সিরিজে। আর কে না জানে নতুন ও অফফর্মের খেলোয়াড়দের নিরীক্ষা করতে তুলনামূলক লো-ভোল্টেজ সিরিজই মোক্ষম মঞ্চ! তিন ম্যাচের এ ওয়ানডে সিরিজের যে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড, সেখানে অবশ্য নতুন মুখ একটিই- ফজলে মাহমুদ রাব্বি। ঘরোয়া ক্রিকেটে এক থেকে ছয় নম্বরের সব পজিশনে খেললেও জাতীয় দলে ডাকা হয়েছে তাকে মিডল অর্ডারে ব্যবহারের জন্য। তবে আজকের ম্যাচে সম্ভবত তার অভিষেক হচ্ছে না। সদ্য জ্বর থেকে সেরে ওঠা রুবেলের একাদশে থাকা অনিশ্চিত। এই দু’জনের সঙ্গে আবু হায়দার রনি এবং আরিফুল হককে বসিয়ে একাদশ সাজাতে পারে বাংলাদেশ। পেস আক্রমণে মুস্তাফিজুর রহমান ও মাশরাফির সঙ্গে সাইফুদ্দিন, আর স্পিনে মেহেদি হাসান মিরাজের সঙ্গে নাজমুল ইসলাম অপু। ওপেনিংয়ে লিটন দাসের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত বা ইমরুল কায়েস। শেষের দু’জনের একজনকে ওয়ানডাউনে রেখে মিডল অর্ডারে মিঠুন, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ। এদিকে বাংলাদেশ দল যখন সাকিব-তামিমকে ছাড়া তুলনামূলক ‘খর্বশক্তি’র দল নিয়ে নামছে, জিম্বাবুয়ে তখন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারে ভরপুর। অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা এবং এলটন চিগুম্বুরা এ নিয়ে নবমবারের মতো খেলতে এসেছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। দলে ফিরেছেন ব্রেন্ডন টেলর, শেন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা এবং কাইল জারভিসরাও। এদের মধ্যে উইকেটরক্ষক টেলর হচ্ছেন সেই ব্যাটসম্যান, সব দেশ মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রান (১২২২) যার। মাশরাফিদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এক হাজারের বেশি রান আছে মাসাকাদজা আর চিগুম্বুরারও। বিপরীতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের এক হাজার করে রান আছে তিনজনের; তার মধ্যে আবার সাকিব, তামিম নেই। কেবল আছেন মুশফিক।
চ্যালেঞ্জটা বাংলাদেশের আসলে এখানেই। সাকিব-তামিমকে ছাড়া আগে আট ম্যাচ খেলতে হলেও কোনো সিরিজের বেশ আগেভাবে দু’জনকে একসঙ্গে হারিয়ে ফেলার ঘটনা এই প্রথম। মাশরাফি বলেছেন ‘ওরা নেই ধরে নিয়েই সবাই প্রস্তুতি নিয়েছে।’ এখন সেই প্রস্তুতি মাঠে বাস্তবায়নের পালা। পালা পঞ্চপাণ্ডবের বিকল্প তৈরি হওয়ার আভাস পাওয়ারও।