বরিশাল শহরের উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্রে অশ্লীলতা প্রতিরোধে কঠোর ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে প্রশাসন। বিশেষ করে এই নগ্নতা বা অসামাজিক কার্যকলাপরোধে জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। সেই সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস চলাকালে বিনোদন কেন্দ্রে আনাগোনার ওপরেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে জেলা প্রশাসকের বাসভবন লাগোয়া বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন ডিসি লেকে ২ শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাদেরকে আটক করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান। সেই সাথে ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অপরাধে তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজের ৪ শিক্ষার্থীকেও আটক করে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে ক্লাস ফাঁকি দেয়ার অপরাধে অভিযুক্ত ৪ মেয়ে শিক্ষার্থীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে মুচলেকার মাধ্যমে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। অপরদিকে প্রকাশ্য নগ্নতার অপরাধে আটক শহীদ আলতাফ মেমোরিয়াল স্কুলের মেয়ে শিক্ষার্থীকে মুচলেকায় মুক্তি দিলেও তার সঙ্গী নলছিটি উপজেলার কলেজ শিক্ষার্থী হিরাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। মূলত এই ঘটনার পর পরই বিনোদন কেন্দ্রে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান।
অভিযোগ ছিল, বরিশালে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থেকে ঘোরাঘুরি করে। এই বিষয়টি নিয়ে বিগত সময়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলেও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ লক্ষ্যণীয় হয়নি। যে কারণে বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে শিক্ষার্থীদের আনাগোনার পাশাপাশি অন্তরঙ্গ মেলামেশার চিত্রও দেখতে হয়েছে। এবার এমনই একটি চিত্র দেখতে পেয়ে তা প্রতিরোধে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান তড়িৎ পদক্ষেপ নিলেন। জেলা প্রশাসকের এই ভূমিকা প্রশংসনীয়ও বটে। কারণ জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাঠে নেমে অপরাধ প্রতিরোধের উদাহরণ সম্ভবত বরিশালে কমই রয়েছে। এক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়দেব চক্রবর্তীর ভাষ্য হচ্ছে, এমন চিত্র জেলা প্রশাসক মহোদয় দেখে হতবাক হয়েছেন। যে কারণে তিনি নিজেই পুলিশ ডেকে তাদেরকে আটকের নির্দেশ দেন।
এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখেন। সরকারি এই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন থেকে কড়াকড়ি থাকবে। যাতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন কোন শিক্ষার্থী ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে না পারে। অবশ্য একই প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বললেন, বিনোদন কেন্দ্রে প্রকাশ্য নগ্নতা শিক্ষার্থীদের আদর্শচ্যুত বা নীতি বিবর্জিত কাজে উৎসাহিত করবে। যে কারণে এমন চিত্র দেখে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীদের অবাধ যাতায়াত রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে জেলা প্রশাসকের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।