নারীর উচ্চশিক্ষা আর্শীবাদ,এটিই ডিভোর্সের কারন নয়।

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago
ডিভোর্স

আজহারুল ইসলামঃ ডিভোর্সের হার বাড়ছে।ডিভোর্সের হার সবচেয়ে বেশি বরিশালে, সবচেয়ে কম সিলেটে। অনেকেই বলছেন নারীর উচ্চ শিক্ষাই নাকি এর জন্য দায়ী। যেদিন থেকে নারী শিক্ষার হার বাড়তে শুরু করল, নারী ঘর থেকে বের হতে শুরু করল সেদিন থেকে ডিভোর্সো বাড়তে লাগল। যদি এই কথাই মেনে নেই তবে সেক্ষেত্রে বলতে হচ্ছে, যে নারী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গন্ডি ছাড়িয়ে চাকরীর বাজারে জায়গা করে নিয়েছে, যে নারী বেগম রোকেয়া, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, ফ্রিদা কাহলো, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসার জীবনী পড়েছে সেই নারীকে যদি আপনি গ্রাম গঞ্জের পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়া অশিক্ষিত কিংবা স্বল্প শিক্ষিত নানী, চাচী, বোনদের মাঝে গুলিয়ে ফেলেন তবে ভুলটা কে করছে বলে মনে করেন? যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিয়ম “স্বামীই একমাত্র অবলম্বন” বিশ্বাস করে শত অত্যাচার সয়ে নিয়ে বেঁচে থাকা নারীর সীমানার সাথে একজন সুশিক্ষিত নারীর সীমানা কখনোই কি এক হতে পারে? একজন শিক্ষিত নারীর সহ্য করার সীমানা নির্ধারণ করে দেয় তার চারপাশের পরিবেশ, শিক্ষা আর মূল্যবোধ। অশিক্ষিত নারীর সীমানা নির্ধারিত হয় কেবলি প্রচলিত নিয়ম দিয়ে। তাই শিক্ষিত নারীর সীমানা কখনোই তার সমান নয় যে নিজের গন্ডির বাইরে আর কিছুই দেখেনি।

একজন শিক্ষিত পুরুষের কাছে একজন শিক্ষিত নারী হিসেবে অবশ্যই যুগ যুগ ধরে চলে আসা নারীর উপর অত্যাচার কখনোই আশা করেনা। আপনি যদি আপনার শিক্ষার মূল্য ভুলে আদি নীতিতে স্ত্রীকে দাবিয়ে রাখার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলাম

চেষ্টা করেন তবে সেই ভুলের পরিণতিতে আপনার কপালে ডিভোর্স ছাড়া আর কিইবা জুটতে পারে? আপনি যদি মনে করেন, সারারাত আপনার পিটুনি হজম করে শরীরে মারের দাগ, লাল হয়ে উঠা ফুলা চোখ নিয়ে অফিসে যাবে, আপনি যদি মনে করেন “রান্না স্বাদ হয়নি কেন?” এই অপরাধে প্লেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে নবাবি হালে টেবিল থেকে উঠে যাবেন আর তিনি নীরবে তা পরিষ্কার করে নেবে। সবই গায়ে হাত তুলেনা, তবে কিছু পুরুষ সামান্য বিষয়ে সামান্যকিছু মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে যায় দিনের পর দিন। নারীর যৌন সুখ অপ্রাপ্তি কিংবা যৌন সুখের অত্যাচারো ডিভোর্সের পেছনে কম গুরুত্বপূর্ণ কারণ নয়। একজন বুদ্ধিমতী, শিক্ষিত, বিচক্ষণ, সচেতন নারীর কাছ থেকে আদি যুগের মুখ বুজে থাকা নারীদের মত ব্যবহার প্রত্যাশা করা নেহায়েত বোকামি বৈকি আর কিছু নয়।

কিন্তু সত্যিইকি নারীর উচ্চশিক্ষা, স্বাধীনতাই ডিভোর্সের মূল কারণ? হাজার হাজার উচ্চশিক্ষিত নারী পুরুষ ত্রিশ চল্লিশ বছরের সুখের সংসার করে যাচ্ছে। আমিতো মনে করি স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, সম্মান, ভালোবাসা, বোঝাপড়া যদি না থাকে সেই সংসার কোনভাবেই দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব না। হোক সেখানে নারী অপরাধী কিংবা পুরুষ অপরাধী। দিনের পর দিন ঝামেলাপূর্ণ সংসার করার চাইতে আলাদা হয়ে যাওয়াটাই উত্তম মনেকরি। তবে আপনাদের প্রতিবাদী মন অবশ্যই সন্তান জন্ম দেয়ার আগে জাগ্রত করবেন।

একটা নিষ্পাপ শিশুকে ব্রোকেন ফ্যামিলিতে রাখার অপচেষ্টা না করাই উত্তম। বাচ্চাটা হয় বাবার আদরে বড় হয়ে উঠে কিংবা মায়ের আদরে। ওদিকে খেলার সাথীকে আব্বু আম্মুর হাত ধরে মাঝখানে হেটে যেতে দেখে সেও কল্পনা করে, সে হাটছে তার বাবা মায়ের সাথে। কিন্তু সে জানেনা আদৌ তার বাবা মা এক হবে কিনা? আর যারা বিয়ে করে নেয় তাদেরতো আর কখনোই এক হয়ে উঠা হয়না। নতুন মা কিংবা নতুন বাবাকে মেনে নেয়াও সহজ কথা না। ডিভোর্সের জন্য কেবল নারী কিংবা কেবল পুরুষ এককভাবে দায়ী নয়। ডিভোর্সের জন্য নারী-পুরুষ উভয়েই দায়ী। তাদের পারস্পরিক স্বাধীনতা দায়ী, তাদের সম্মানহীনতা দায়ী, তাদের ভুল বুঝাবুঝি দায়ী, তাদের যৌনজীবন দায়ী, তাদের আপোষহীন মনোভাব দায়ী, তাদের কুরুচি দায়ী। কেউ যখন কারো জায়গা এক তিল পরিমাণ ছাড়তে চায়না তখন যৌথ জীবন আদৌ কি সম্ভব? বিবাহিত জীবনের মূল শর্ত যেখানে অংশীদারিত্ব সেখানে একক ইচ্ছা কিভাবে পূর্ণ করা সম্ভব?

তাহলে আসুন দেখি, কেন আমাদের দেশে এতো পরিমানে ডির্বোস বাড়ছে ঃঃ

১. ধর্মীয় মনোভাবের অভাব

২. আধুনিকতার নামে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি।

৩. পরকীয়া

৪. স্বামী – স্ত্রীর বোঝাপড়ার অভাব।

৫. পুরুষের যৌন অক্ষমতা

৬. পুরুষদের পুরুষত্বাত্রিক মনমানসিকতা।

৭. নারীদের অশ্লীলতা

৮. যৌতুক

৯. পুরুষ একজন নারীকে শুধু যৌনদাসী হিসেবে দেখার মনোভাব।

১০. স্বামী – স্ত্রীর দায়িত্বহীনতা।

১১. অভিভাবকদের অসচেতনতা।

১২. স্বামীর পরিবারের সদস্যদের সৎ মনমানুসিকতার অভাব।

১৩. গ্রামীন সমাজে নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে অসেচতন।

১৪. আমাদের দেশের আইনের Lengthy প্রকিয়ার কারনে নারীরা অন্যায়ের শিকার হয়েই বিচারেরর এই অবস্থার কারনে কোর্টে যাবার অমনমানসিকতা।

১৫. বিকৃত যৌন লালসা।

১৬. স্বামী বা স্ত্রীর অতীতের প্রেম।

১৭.পারস্পারিক সম্মানের অভাব।

১৮. ভালোবাসার অভাব। এগুলো আমাদের দেশের ডিভোর্সের মূল কারন বলে আমি মনে করি।

—-আজহারুল ইসলাম—-

,আইন বিভাগ ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।