এশিয়াড ফুটবলের ফাইনালে জাপানের বিপক্ষে জিততে না পারলে ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেতে পারে টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিনের। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টায়।
‘ফুটবল অনেকের কাছে জীবন-মরণের ব্যাপার। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এর গুরুত্ব তার চেয়েও আরও অনেক বেশি।’লিভারপুলের কিংবদন্তি কোচ বিল শ্যাঙ্কলির কথাটার মর্ম এখন হয়তো আরও ভালো করে বুঝতে পারছেন সন হিউং-মিন। পারছেন বলেই তো জাপানের বিপক্ষে আজ এশিয়ান গেমস ফুটবলের ফাইনালটা তাঁর কাছে জীবন-মৃত্যুর চেয়েও বড় হয়ে গেছে।
মানুষ বাঁচে স্বপ্ন নিয়ে। সন হিউং-মিনের সেই স্বপ্নই ফুটবল। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার হয়ে আজকের ম্যাচটা জিততে না পারলে তাঁর স্বপ্ন থেমে যেতে পারে এখানেই। আর স্বপ্ন না থাকলে বেঁচে থেকে কী লাভ, মরে গেলেই বা কী! এশিয়ান গেমসের এই ফাইনালটা কেন সনের কাছে জীবন-মরণের চেয়ে বড় হয়ে গেছে, তা এত দিনে অনেকেরই জানা হয়ে গেছে হয়তো। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ম, যেকোনো সুস্থ পুরুষকে বয়স ২৮ হওয়ার আগে সামরিক বাহিনী যোগ দিয়ে অন্তত ২১ মাস কাজ করতে হয়। কারও জন্যই এতে ছাড় নেই, তবে ক্রীড়াবিদদের জন্য নিয়মটা একটু শিথিল করা হয়েছে। অলিম্পিক বা বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে পদক জিততে পারলে সামরিক বাহিনীতে কাজ করা থেকে ছাড় পাওয়া যায়। এশিয়ার আঞ্চলিক ‘অলিম্পিক’ এশিয়ান গেমসের ক্ষেত্রে আবার যেকোনো পদক হলেই চলবে না, জিততে হবে সোনাই।
সনের বয়স ২৬ হয়ে গেছে, এখনো সেই শর্ত পূরণ করেননি। ইনচনে ২০১৪ এশিয়ান গেমসের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর কোরিয়াকে হারিয়ে অবশ্য সোনা জিতেছিল দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু সনের তখনকার ক্লাব বায়ার লেভারকুসেন তাঁকে ছাড়েনি বলে সেটিতে খেলা হয়নি তাঁর। ওদিকে ২০২০ অলিম্পিক শুরু হওয়ার মাত্র ১৬ দিন আগেই ২৮-এ পা দিয়ে ফেলবেন। তার মানে এটাই তার শেষ সুযোগ। জিততে না পারলে টটেনহামের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে চলে যেতে হবে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দুই বছর সেনাবাহিনীর চাকরি শেষ করে আবার যদি ফুটবলে ফেরেনও, ইউরোপের কোনো বড় ক্লাব কি তাঁকে নেবে?
ক্যারিয়ারের এই সুবর্ণ সময়, টটেনহামের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা, বিশ্বের নামীদামি তারকাদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ, বিশাল বেতন-সবই হারাবেন সন। এমন চাপ নিয়ে ফুটবল ইতিহাসে আর কখনো কেউ কোনো ম্যাচ খেলেছেন কি? অথচ এমন চাপ নিয়েও সন কী অস্বাভাবিক শান্ত, ‘এটা তো ফাইনাল। আর ফাইনালে তো একটু চাপ থাকবেই। অন্য কিছু ভাবছি না। আমি আমার দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।’
ক্যারিয়ারের সেরা ছন্দে থাকা সনকে এভাবে হারাতে চায় না টটেনহামও। তাই তো নিয়মের বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও তাঁকে জাতীয় দলে খেলতে ছেড়ে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। ক্লাব-সতীর্থরা একের পর এক শুভকামনা পাঠাচ্ছেন তাঁকে, বার্তা পাচ্ছেন টটেনহাম সমর্থকদের কাছ থেকেও। কোচ মরিসিও পচেত্তিনোও শুভকামনা জানিয়েছেন।
সনই জানালেন, ‘বেন ডেভিস (টটেনহাম ডিফেন্ডার) তো আমাকে প্রতিদিনই একটা করে বার্তা পাঠায়। প্রতিটি ম্যাচের আগে আমাকে শুভকামনা জানায়।’ শুধু একটাই আক্ষেপ। দুই সতীর্থ হ্যারি কেন আর ডেলে আলি এখনো শুভকামনা পাঠাননি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যদি ওরাও কিছু লিখে পাঠাত, ভালো লাগত আমার।’ সত্যিই তো, এমন ম্যাচের আগে যে সবার শুভকামনাই দরকার সনের।