আরএসএসের অনুষ্ঠানে রাহুলকে আমন্ত্রণ?

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago
রাহুল গান্ধী

কট্টর সমালোচকদের আহ্বান জানিয়ে সমালোচনার তির ভোঁতা করার এক প্রস্তাব নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘে (আরএসএস) চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। সংঘের একটি মহল মনে করছে, সংঘের অনুষ্ঠানে যেভাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আহ্বান জানানো হয়েছিল, ঠিক সেই ভাবে কট্টর বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানালে সংঘকে ঘিরে একটা জাতীয় বিতর্ক দানা বাঁধতে পারে। অবসান হতে পারে সংঘ সম্পর্কে অনেক ‘ভ্রান্ত’ ধারণার।

সংঘের যে মহলে এই ভাবনা উঁকি মারছে তাঁরা মনে করছেন কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী ও কমিউনিস্ট নেতা সীতারাম ইয়েচুরিকে ডাকা উচিত। কারণ, এই দুই দল সংঘের সবচেয়ে বড় সমালোচক। তারা চাইছে, দেশের মানুষের কারও কারও মনে সংঘ সম্পর্কে যে ‘ভ্রান্ত’ ধারণা রয়েছে, এই বিতর্ক তার অবসান ঘটাতে পারবে। এই মহল মনে করছে, সংঘ যে শুধু ‘হিন্দু হিতের’ কথা ভাবে না, ভাবে ‘সব ভারতীয়ের মঙ্গলের’ কথা, এমন আমন্ত্রণ তা স্পষ্ট করে দিতে সাহায্য করবে।

আগামী মাসে দিল্লিতে আরএসএস তিন দিনের এক আলোচনা সভার আয়োজন করছে। সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত সেই অনুষ্ঠানের সূচনা করবেন। আরএসএসের চোখে ভবিষ্যতের ভারত কেমন, সেটাই হবে ওই আলোচনা সভার মূল বিষয়। তিন দিনের ওই আলোচনায় রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরিদের মতো কট্টর বিরোধী নেতাদের ডাকার প্রস্তাব এই মুহূর্তে সংঘে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এই বছরের জুন মাসে সংঘের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর নাগপুর যাওয়া নিয়ে দেশজোড়া বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। প্রণব বাবু তাঁর সিদ্ধান্তের সপক্ষে কোনো সাফাই যেমন গাননি, তেমনই রাহুলও সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু বিভিন্ন সময় রাহুল আরএসএসকে তীক্ষ্ণ ভাষায় তীব্র আক্রমণ করে চলেছেন। সম্প্রতি তিনি আরএসএসকে আরব দুনিয়ার ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। এমন কথাও বলেছেন, সংঘের আক্রমণ তাঁকে রাজনীতিক হিসেবে আরও দক্ষ করে তুলেছে। তিনি যে ভারতীয়, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখিয়েছে। সংঘ পরিবারের যাঁরা বিতর্ক সৃষ্টিতে উৎসুক, তাঁরা মনে করেন, রাহুল বা সীতারাম ইয়েচুরিদের সমালোচনা দেশব্যাপী বিতর্ক তৈরির সহায়ক হবে। সেই বিতর্ক সংঘ সম্পর্কে অনেক মানুষের অনেক ‘ভ্রান্ত’ ধারণা দূর করতে সাহায্য করবে।

আরএসএসের মুখপাত্র অরুণ কুমার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জাতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রকমের মতামত রয়েছে। সংঘ পরিবারেরও মত রয়েছে সমসাময়িক ওই সব বিষয় নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ওই বিভিন্ন অভিমত জানা এবং সংঘের মনোভাব জানানোই ওই আলোচনা সভার মূল উদ্দেশ্য। সে জন্যই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকে ডাকার কথা ভাবা হচ্ছে। রাহুল বা সীতারামদের ডাকা হবে কি না, জানতে চাওয়া হলে অরুণ কুমার অবশ্য স্পষ্ট করে সংঘের সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। বলেছেন, কাকে ডাকা হবে বা হবে না, তা সংঘই ঠিক করবে।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুরে ১৯২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আরএসএসের প্রতিষ্ঠা। ৯৩ বছরের এই সংগঠনের ব্যাপ্তি দেশজোড়া হলেও বহু দলের ধারণা, সংগঠনটি কট্টর হিন্দুদের জন্য এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী আদর্শের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সংঘ সূত্রের কথায়, এই ‘ভ্রান্ত’ ধারণা বদলানোর প্রয়োজন আছে। অরুণ কুমারের মতে, সংঘ যে ভারতীয়ত্ববাদী, বিতর্কের মধ্য দিয়ে তা প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।
কংগ্রেসের এক সূত্র এই বিষয়ে বলে, এখনো রাহুলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাই এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া অর্থহীন। তবে এটা স্পষ্ট, কংগ্রেস নেতাদের স্পর্শে আরএসএস তার কালিমা ঘোচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর তারা এখন আরও সর্বগ্রাহ্য অতিথিদের কথা ভাবতে শুরু করেছে।