নেইমার রিয়ালে, ইঙ্গিত ব্রাজিলের চ্যানেলগুলোর সিদ্ধান্তে

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

নেইমার-রিয়াল মাদ্রিদ নাটকের নতুন পর্ব। ব্রাজিলে দেখানো হবে না লিগ ওয়ানের খেলা, ফলে দেখা যাবে না নেইমারের খেলা। এতে অনেকেই নেইমারের দলবদলের ইঙ্গিত পাচ্ছেন

কাব্য করে লাভ কী, যদি সেটা কাউকে শোনানো না যায়? অসাধারণ কোনো শিল্পের জন্ম দিয়েও কি কোনো লাভ আছে, যদি না সেটা উপভোগ করার কাউকে খুঁজে না পাওয়া যায়? এ প্রশ্নগুলোর সঙ্গে হাত ধরাধরি করেই একটি প্রশ্ন করে ফেলা যাক, কী লাভ গোল করে, সে গোলে যদি ভক্তেরা তালিই না দেয়!

এমন প্রশ্ন নিজেকে নিজে করতেই পারেন নেইমার। কারণ, বিশ্বজুড়ে তাঁর অগণিত ভক্ত থাকতে পারে, তাঁর গোলে মন জুড়াতে পারেন। কিন্তু নেইমার নিজেও জানেন তাঁর সেরা ভক্তরা সবাই বাস করেন দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশে, ব্রাজিলে। গত মৌসুমে ফ্রেঞ্চ লিগ মাতানো নেইমার এবারও দুর্দান্ত শুরু করেছেন লিগে, দুই ম্যাচে করেছেন দুই গোল। কে জানে এবার হয়তো লিগ ওয়ানের গোলের সর্বকালের সব রেকর্ডও ভেঙেচুরে দিতে পারবেন পরিপূর্ণ সুস্থ থাকলে। কিন্তু ব্রাজিলে থাকা তাঁর সবচেয়ে বড় ভক্তকুল যে সে মুহূর্তগুলোই দেখতে না পারেন, তবে পূর্ণ তৃপ্তি আসবে?

গোলডটকমে ড্যানিয়েল এডওয়ার্ডস এ প্রশ্নটাই করেছেন নেইমারের কাছে। গত মৌসুমে ফেব্রুয়ারির পর আর খেলতে পারেননি, তার পরও ২৮ গোল করেছেন নেইমার। এবারও তাই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের কাছ থেকে গোলবন্যা আশা করা যাচ্ছে। কিন্তু ব্রাজিলের টিভি দর্শকের সরাসরি তা দেখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, দেশটির টিভি সম্প্রচারকারীরা কেউ লিগ ওয়ানের টিভি স্বত্ব কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাননি। নেইমার নিজেই যেখানে বলছেন পিএসজিতেই থাকবেন, এখানেই কিছু করে দেখাবেন, তাতে আস্থা রাখতে পারছে না তারা, নাকি ফ্রেঞ্চ লিগে যত রেকর্ডই ভাঙুন না কেন, সেটা গোনায় ধরতে চাইছে না কেউ!

ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে ফ্রেঞ্চ লিগ ঢুকে পড়েছে এখন। এ লিগে গোল করে এখন তাই ইউরোপিয়ান সোনালি জুতার দৌড়ে থাকা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ফ্রেঞ্চ লিগের মান নিয়ে ইউরোপের শীর্ষ চার লিগে একটু নাক সিটকানো ভাব আছে। এমনিতেই দুর্বল এক লিগে পিএসজির মতো কাতারি অর্থে ধনবান দল লিগটাকে আরও একপেশে করে দিচ্ছে। একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে টিকে থাকা মোনাকো থেকেও অর্থের ভারে সেরা তারকা নিয়ে যায় পিএসজি। ফলে ফ্রেঞ্চ লিগ নিয়ে ইউরোপে কেউই মাথা ঘামাতে যায় না। ইতালি কিংবা জার্মানিতেও একপেশে শিরোপা লড়াই, কিন্তু সেখানকার খেলার মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। লিগ ওয়ানের ক্ষেত্রে মান নিয়ে লড়াইয়ের মুখ নেই খুব একটা।

নেইমারের জন্য তাই পিএসজি এক বড় ‘কিন্তু’ হয়ে উঠেছে। প্যারিসের ক্লাবে খেলে বিশ্ব ফুটবলে নজর কাড়ার তাই একটিই উপায়, আর সেটা হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। কিন্তু এক মৌসুমেই নেইমার-এমবাপ্পেকে কিনেও নিজের ভাগ্য বদলাতে পারেনি দলটি। শেষ ষোলোতেই বিদায় নিয়েছে গতবারও। এবারও যে এর ভিন্ন কিছু হবে, এমনটা আশা দেখাতে পারছে না কেউ।

এর চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। লিওনেল মেসির ছায়ায় থাকবেন না বলে পিএসজিতে এসেছেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছিলেন বলেই রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার প্রসঙ্গে বারবার যতি পড়েছে। কিন্তু এবার পিএসজিতে যে বয়ঃকনিষ্ঠ এমবাপ্পের আড়ালে পড়ার দশা। একে তো সদ্য বিশ্বকাপ জেতায় ফ্রান্স ও প্যারিসের নয়নের মণি এখন এমবাপ্পে। ক্লাবের জার্সি বিক্রিতে তাঁকে পোস্টার বয় বানিয়েছে ক্লাব। আবার গত সপ্তাহেই নেইমার মাঠে থাকা অবস্থায় ১-০ তে পিছিয়ে পড়া দলকে উদ্ধার করেছেন বদলি নামা এমবাপ্পে। এ মৌসুমে এমন কিছু বারবারই হয়তো দেখা যেতে পারে।

এ কারণেই নেইমারের রিয়ালে যাওয়ার গুঞ্জন আবারও শুরু হয়েছে। মাসের শুরুতেই একদম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নেইমারকে নেওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ জানিয়েছে রিয়াল। কিন্তু অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা ৩০০ মিলিয়ন ইউরো এবং দলবদলে কোনো ফরোয়ার্ড কেনার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না থাকা ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্বকাপজয়ী সাবেক বার্সেলোনা তারকা রিভালদো যেমন বিশ্বাস করেন, নেইমার একদিন রিয়ালে খেলবেনই, ‘আপাতত আমি ওর কথা বিশ্বাস করছি যে সে পিএসজিতে থাকবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যা শুনেছি, আগে হোক পরে হোক সে রিয়ালে যাবে।’ আর এবারই পিএসজি থেকে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ে আসা ইউরি বেরচিচেও বলছেন সাবেক সতীর্থকে খুব শিগগির লা লিগায় সঙ্গী পাবেন, ‘ও ফিরবে বলেই মনে হয় তবে নীল-লালে (বার্সেলোনা) নয়, সাদাতে (রিয়াল)। সে বার্সেলোনাতে খুব সুখী ছিল। সে এখনো লা লিগা খুব পছন্দ করে। আমি জানি কারণ ওর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব আছে, সে অসাধারণ মানুষ। সে মাদ্রিদে এলে তার জন্য শুভকামনা।’

মাদ্রিদে নেইমারের চলে আসার কথা যত সহজে বলা হচ্ছে, কাজটা এর চেয়ে অনেক কঠিন। একে তো ৩০০ মিলিয়ন ইউরোর ট্যাগ, সে সঙ্গে মৌসুমে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ইউরো বেতনের ব্যাপারটাও আছে। রোনালদোকে এর চেয়ে প্রায় অর্ধেক বেতন দিত রিয়াল। কিন্তু একই মৌসুমে জিদান ও রোনালদোকে হারানো ক্লাবটি সমর্থকদের শান্ত করতে চায়। সেই সঙ্গে ক্লাবের গ্যালাকটিকো আনার সংস্কৃতির কথা চিন্তা করলে নেইমারের দলবদল এখনো আলোচনায় পানি পাচ্ছে। আর ব্রাজিলিয়ান টিভি সম্প্রচারকারীদের লিগ ওয়ানের টিভি স্বত্ব না কেনার সিদ্ধান্ত যে সুদূরপ্রসারী কোনো সিদ্ধান্ত নয়, এ কথাও তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না!