টেকনাফে র‌্যাবের নতুন ৫টি ইউনিটের যাত্রা শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধে টেকনাফে নতুন করে স্থাপন করা র‌্যাবের ৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প পরিদর্শনে বৃহস্পতিবার টেকনাফ যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমদ।

আগামীকাল বিকেলে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে তারা টেকনাফের ইয়াবা পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত বিভিন্নস্থানে স্থাপন করা এসব অস্থায়ী র‌্যাব ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।

কক্সবাজার শহর ও টেকনাফের বরইতলীতে স্থান নেয়া আগের ২টির পাশাপাশি নতুন ৫টি ক্যাম্পের পথচলা হিসেবে মঙ্গলবার কক্সবাজার শহর, রামু ও টেকনাফের মহাসড়কসহ মেরিন ড্রাইভে অর্ধশতাধিক বিশেষ যান নিয়ে টহল শোভাযাত্রা করেছে র‌্যাব সদস্যরা।

কক্সবাজার শহরের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে এসব গাড়ি টহলযাত্রা শুরুর পর মহাসড়ক হয়ে মেরিন ড্রাইভ এসে টেকনাফ গিয়ে শেষ হয়। আর এসব নতুন ক্যাম্প দেখতে বাহিনী প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টেকনাফ যাচ্ছেন।

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ক্যাম্প ও সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বেসরকারি একটি বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন মাননীয় মন্ত্রী ও র‌্যাব ডিজি।

বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শামলাপুর, সাবরাং এবং টেকনাফ-১ ও ২ ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করবেন তারা। এরপর কক্সবাজার সৈকত এলাকার একটি তারকা হোটেলে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত একটি বিশেষ সমন্বয় সভায় মিলিত হবেন মন্ত্রী ও ডিজি।

এছাড়া শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একইস্থানে মাদক বিরোধী মতবিনিময় সভা এবং বেলা ১টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সিসিটিভি মনিটরিং ব্যবস্থার উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী। বিকেলে একই বিমানে ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে তার।

র‌্যাব সূত্র জানায়, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে মাঠে নেমেছে র‌্যাব। নানান কৌশলে তারা দেশ থেকে ইয়াবা নির্মূল করতে কাজ করছে। এজন্যই ইয়াবার ট্রানজিট শহর হিসেবে পরিচিত টেকনাফে র‌্যাবকে শক্তিশালী করতে নতুন ক্যাম্পগুলো স্থাপন করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার বিসিক শিল্প নগরী ও টেকনাফের বরইতলী ক্যাম্পের পাশাপাশি টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড, বাহারছড়া ও হোয়াইক্যংয়ে নতুন ক্যাম্পগুলো স্থাপন করা হয়।

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে এসব ক্যাম্পে ৩ প্লাটুন করে মোট ১৫ প্লাটুন সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি রয়েছে ডগ স্কোয়াডও। জিরো টলারেন্সে থাকা র‌্যাব সবার সহযোগিতা পেলে বিশেষ সফলতা পাবেন বলে আশা করেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র মতে, তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের মাঝে টেকনাফের শীর্ষ ২০ ইয়াবা ব্যবসায়ী সারাদেশের মোট ইয়াবা ব্যবসার ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন। এ কারণে ট্রানজিট পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো খুব জরুরি। ইয়াবা আগ্রাসন বন্ধ করতেই নতুন ক্যাম্পগুলো বসানো হয়েছে। আর কক্সবাজার জেলা থেকে তালিকাভুক্ত এক হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মাঝে টেকনাফ সদরে তালিকাভুক্ত বড় ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৯৩ জন। তারা সবাই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে, গত ৪ মে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে শুরু হওয়া অভিযানের পর কক্সবাজারের টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত বেশ কয়েকজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। গা-ঢাকা দেন অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী। এসব নিয়ে জেলায় একটা স্বস্তি দেখা দিলেও গত ২৭ মে দিবাগত কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের নোয়াখালিয়া পাড়ায় র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক।

তার মৃত্যু নিয়ে একটি হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্ম হলে পুরো অভিযান নিয়েই নানান বিতর্ক জন্ম নেয়। থমকে যায় অভিযান। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবার এলাকায় ফিরে ইয়াবা কারবারিরা। বাড়তে থাকে ইয়াবা পাচার। এটি রোধ করতে গত ২৩ জুলাই র‌্যাব কর্তৃক নির্মিত মাদকবিরোধী বিজ্ঞাপন (টিভিসি) ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ প্রচারানুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে কক্সবাজার হতে মাদকের চোরাচালান ও মাদকের লেনদেন ঠেকাতে দুই মাসের জন্য কক্সবাজারে মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধের প্রস্তাব দেন পুলিশের এলিটফোর্স র‌্যাব’র মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।

তার মতে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে কক্সবাজারে শতকোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হচ্ছে। কক্সবাজারে চোরাচালানের এ লেনদেন বন্ধ করা গেলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এরপর সম্প্রতি আরেক অনুষ্ঠানে ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধে সীমান্ত এলাকার মাদকের গড়ফাদার ও গড়মাদার ধরতে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় টেকনাফ সীমান্তে র‌্যাবের নতুন ৫টি ইউনিট যাত্রা শুরু করেছে।