সিদ্দিকুর রহমান ॥ আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। বরিশালকে তিলোত্তমা নগরীতে পরিনত করতেই কে হবেন আগামীর নগর পিতা? এছাড়াও ৩০ টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরাই বা কেমন হবে এ নিয়ে নগরীর তরুণ ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। আসন্ন ভোট নিয়ে তারা বুনছেন স্বপ্নের জাল। নতুন ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, তারা প্রতীকে বিশ্বাসী নয়, যোগ্য ও আধুনিক চিন্তাশীল ও মানবিক গুণাবলীর প্রার্থীকেই বেছে নিতে চান। যে কিনা নগর উন্নয়নের পাশাপাশি যুব সমাজের ভাগ্যে উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। তাছাড়া আগামী ৩০ জুলাইয়ের বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় ৩১ হাজার নতুন ভোটার তাদের আমানতের সঠিক ব্যবহার করতে চান। পাশাপাশি সর্বোচ্চ সংখ্যক নতুন ভোটারই ভোট কেন্দ্রে যাবেন বলে ধারনাও করছেন তারা।
নগরীর ৬ নং ওয়ার্ডের নতুন ভোটার মাইদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সবদিকেই তরুণদের জয়জ্বয়কার। আমরা যেমন তরুণ, তেমনি আমাদের প্রত্যাশা তরুণ প্রার্থীরাই নির্বাচনে জয়লাভ করুক। তাদের বলিষ্ট নেতৃত্বে নগরীর তরুণ সমাজকে মাদকের হাত থেকে দূরে সড়িয়ে রাখবে। পাশাপাশি সামাজিক ও সাংষ্কৃতিক কর্মকান্ডে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ করবে।
এছাড়াও ১৭ নং ওয়ার্ডের তরুণ ভোটার রেজওয়ান রেজবির কাছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন একজন মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই, যিনি তরুণদের নিয়ে ভাববেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যিনি উদ্যোগী হবেন, মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হবেন। তাছাড়া সচেতন নাগরিক ও নতুন ভোটার হিসেবে আমার মতামতের গুরুত্ব আছে বলেও মনে করছি। একই ওয়ার্ডের আরেক নতুন ভোটার সাইফুল ইসলাম বলেন বর্তমানে যোগ্য নেতৃত্বের বড়ই অভাব। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি- প্রতীক নয়, প্রার্থী দেখেই ভোট দেব।
১৮ নং ওয়ার্ডের নতুন ভোটার ফয়সাল আহমেদ বলেন, প্রায় সময় বৃষ্টি হলেই নগরীর বগুড়া রোডসহ আরো কয়েকটি সড়ক পানির নিচে চলে যায়। আমরা নোংরা ও জলজটের নগরী আর দেখতে চাই না। সময়ের সঙ্গে মানুষের রুচিবোধেও পরিবর্তন আসছে । যিনি এসব বিষয়ে উন্নয়ন করবেন বলে মনে করছি, আগামীর সিটি নির্বাচনে তাকেই আমি ভোট দেব।
১৯ নং ওয়ার্ডের তরুণ ভোটার আরাফাত হোসেন অনিক বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবার একটাই চাহিদা নগরীর উন্নয়ন হোক, সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মতো উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখুক। তাছাড়া নগরীর নিম্নবর্তী ও বর্ধিত অঞ্চলগুলো উন্নয়নের ছোয়া আরো বৃদ্ধি হোক। আর এই সকল কর্মকান্ডের ধারা যে অব্যাহত রাখতে পারবে তাকেই মূল্যবান ভোটটি দিবো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ২১ নং ওয়ার্ডের তরুণ ভোটার আলামিন রাব্বি বলেন, আমি মনে করি দলীয় নয়, প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তিটি কেমন- সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যিনি মেয়র হবেন তিনি ভোটের আগে যেমন, পরেও তেমন থাকবেন। মেয়রকে হতে হবে মানবিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক।
২৫ নং ওয়ার্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নতুন ভোটার বলেন, দলীয়ভাবে প্রার্থীর মাধ্যমে নির্বাচন হলেও আমার কাছে সেটা আসল বিষয় নয়। আমি বিশ্বাস করি, প্রার্থীর ব্যাক্তি ইমেজ সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু! সে হিসেব করেই ভোট দিবো।
বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ২শ’ ২৭জন। এবার তা বেড়ে ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জনে পৌঁছেছে। যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪শত ৩৬ জন এবং মহিলা ১ লাখ ২০ হাজার ৭শত ৩০ জন। তাছাড়া এবার নতুন ভোটার বেড়েছে ৩০ হাজার ৯শ’ ৩৯জন। আর এই প্রায় ৩১ হাজার নতুন ভোটারই প্রার্থী নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাই নগরীর এই নতুন ভোটারদের নিয়ে বেশ মনোযোগী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তারাও নতুন ভোটারদের টার্গেট করে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন। তরুণদের সামনে তারা তাদের ভবিষ্যতের নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছেন। এছাড়াও তারা ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ভিডিও ডকুমেন্টারি কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে তুলে ধরছেন আগামীর বরিশাল তথা নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের উন্নয়ন করার পরিকল্পনা।