ভোলার অ্যাসিডদগ্ধ তানজিম আক্তারের (মালা) শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। তাঁর শরীরে পানি জমে যাওয়ায় ফুলে গেছে। বিভিন্ন অংশও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে রাজধানীর মিরপুরে অ্যাসিড সারভাইভরস ফাউন্ডেশন (এএসএফ) হাসপাতালে তানজিমের ছোট বোন মারজিয়ার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ বছর বয়সী তানজিমকে দেখতে আজ শনিবার (০৭ জুলাই) সকালে এএসএফের এক চিকিৎসকের সঙ্গে যান তার বাবা মো. হেলাল ও মা জান্নাতুল ফেরদৌস। তানজিমকে দেখে আসার পর মো. হেলালের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তানজিমের অবস্থা ভালো না। আরও খারাপ হচ্ছে। ওর হাত-পা ফুলে গেছে। এখন কী হয় বুঝতে পারছি না।’
এএসএফের চিকিৎসক বলেন- তানজিমের কিডনি, যকৃৎসহ বিভিন্ন অংশ সংক্রমিত হওয়ায় শরীরে পানি জমে যাচ্ছে। এই পানি শরীর থেকে বের হতে পারছে না। এ কারণে তানজিমের শরীর ফুলে যাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
শনিবার দুপুরের পর থেকে তানজিমকে আরও এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। এএসএফের ওই চিকিৎসক বলেন- অ্যাসিডদগ্ধ হওয়ার পর থেকে মেয়েটিকে এ পর্যন্ত ২৫ ব্যাগেরও বেশি বি পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়েছে। শনিবার একজন দাতা জোগাড় করে আরও এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে।
এদিকে মিরপুরে এএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তানজিমের ছোট বোন মারজিয়াকে শনিবার সকালে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় হাঁটাচলা করতে দেখা গেছে। কখনো সঙ্গী এক ছোট মেয়ের সঙ্গে খেলছে, কখনোবা টিভি সেটের সামনে বসে কার্টুন দেখছে সাত বছরের এই শিশু। তবে শরীরে ক্ষতচিহ্ন এখনো শুকায়নি। এএসএফের চিকিৎসকেরা বলেন, মারজিয়ার মাথায় দগ্ধ হওয়া স্থানে অস্ত্রোপচার করে চামড়া স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে চুল গজাবে কি না, এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। চুল না গজালে পরে আরেকবার অস্ত্রোপচার করাতে হবে। তবে মারজিয়ার অবস্থার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।
গত ১৪ মে দিবাগত রাত দুইটার দিকে ভোলায় উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নে রাঢ়ীবাড়িতে রাতে ঘুমের মধ্যে এই দুই বোন একসঙ্গে অ্যাসিডদগ্ধ হয়। মেয়েদের চিৎকারে ছুটে গিয়ে তাদের ধরলে মা জান্নাতুল ফেরদৌসের হাতও অ্যাসিডে দগ্ধ হয়।
এসএসসি পাস তানজিম আক্তার এখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছে। তার শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক চোখ, এক কান ও নাকের খানিকটা অংশ গলে গেছে। আরেক চোখের অবস্থাও ভালো নয়। মুখ থেকে বুকের নিচ পর্যন্ত গভীরভাবে দগ্ধ হয়েছে তার। সব মিলিয়ে তানজিমের শ্বাসনালিসহ শরীরের ২৪ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। ১২ শতাংশ দগ্ধ হওয়া মারজিয়ার অবস্থা ভালোর দিকে। মারজিয়ার মাথা, পিঠ ও বুক থেকে ঊরু পর্যন্ত দগ্ধ হয়। তানজিমকেও প্রথমে এএসএফ হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং সেখান থেকে আবার আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর ১৫ মে ভোলা সদর মডেল থানায় তানজিম ও মারজিয়ার মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।
তানজিম ও মারজিয়ার বাবা মো. হেলাল রাঢ়ী চট্টগ্রামে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ভোলায় থাকেন। তানজিম ভোলা থেকে এসএসসি পাস করে। দুই মাস আগে মুঠোফোনে রং নম্বরের মাধ্যমে মহব্বত হাওলাদার (১৯) নামের একজনের সঙ্গে তানজিমের পরিচয় হয়। তিনি তানজিমের ভালো-মন্দের খোঁজ নিতেন। তানজিম কোন কলেজে ভর্তি হবে, তা নিয়ে ওদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগে। তানজিমের সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের প্রেমের সম্পর্ক আছে, মূলত এ সন্দেহের কারণেই মহব্বত অ্যাসিড মারেন।
সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তারের পর ২৬ মে মহব্বত হাওলাদার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে অ্যাসিড মারার কথা স্বীকার করেছেন। এখন তিনি কারাগারে আছেন।
ব্র্যাকের সহায়তায় তানজিম ও মারজিয়াকে এএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ মে থেকে এই দুজনের চিকিৎসার ব্যয় বহন করছে এএসএফ।’