ক্রেডিট কার্ড নীতিমালায় সংশোধন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে এ সেবায় সুদের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো ভোক্তা ঋণ নয়, অন্য যেকোনো ঋণের সর্বোচ্চ সুদের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ সুদ যোগ করে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণের সুযোগ পাবে। এতে এর সুদহার আগের চেয়ে বাড়বে।
এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বা দ্বৈত মুদ্রায় সাপ্লিমেন্টারি কার্ড ইস্যু করার বিষয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়েছে। নীতিমালাটি আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এক সার্কুলারে ক্রেডিট কার্ড নীতিমালায় সংশোধন করেছে। যা দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু পরিচালনা এবং এ সেবার ঝুঁকিগুলো আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূভাবে মোকাবেলা এবং গ্রাহক স্বার্থ রক্ষার্থে গত ১১ মে ক্রেডিট কার্ড সেবা সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়-ভোক্তা ঋণের যে সুদহার রয়েছে, তার চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বেশি হতে পারবে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ভোক্তা ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ। সেই হিসাবে ক্রেডিট কার্ডে সর্বোচ্চ সুদহার হত ১৭ শতাংশ। কিন্তু ভোক্তাঋণের সর্বোচ্চ সুদহারের সঙ্গে এ সেবার সুদহার নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি জানায় বেসরকারি খাতের দ্য সিটি, ব্র্যাক ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্রেডিট কার্ডে ঋণ সেবাটি ব্যাংকের অন্যান্য সেবার মতো নয়। জামানতবিহীন ঋণ হওয়ায় এক্ষেত্রে খেলাপির ঝুঁকি অনেক বেশি। কিছু গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডে টাকা ঋণ নিয়ে ওই কার্ড আর ব্যবহার করেন না। ফলে এ সেবার গ্রাহকদের নিবিড়ভাবে তত্ত্বাবধান করতে হয়। তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ক্রেডিট কার্ডে ঋণের সুদহার বেশি। এমন যুক্তি তুলে ধরে ব্যাংকের যেকোনো ঋণের সর্বোচ্চ সুদের সঙ্গে ৫ শতাংশ সুদ যোগ করে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণের দাবি জানান তারা।
আগের নীতিমালায় বৈদেশিক মুদ্রায় বা দ্বৈত মুদ্রায় সাপ্লিমেন্টারি কার্ড ইস্যু করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। তাই সংশোধিত নীতিমালায় এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে।
এছাড়া সংশোধিত নীতিমালায় ক্রেডিট কার্ডের বিল কালেকশনের সময়সীমা বন্ধের দিনে শেষ হলে তা তার গ্রেস পিরিয়ড পরবর্তী কার্যদিবস পর্যন্ত বর্ধিত করার সুবিধা রাখার বিধান করা হয়েছে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডের অর্থ আদায়ে গ্রাহককে যখন তখন টেলিফোনে বা অসময়ে বিরক্ত না করে উপযুক্ত সময়ে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে, সংশোধিত নীতিমালায় ক্রেডিট কার্ড সেবায় প্রতারণা রোধে গ্রাহক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মাচার মানার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিটি আউটলেটে (পয়েন্ট অব সেল বা পৌজ) পিন কোর্ড অথবা বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপরও জোর দেয়া হয়েছে।