বরিশালের গৌরনদীর আলোচিত স্কুলছাত্রী কবিতা আক্তার (১৫) হত্যার দীর্ঘ ২ বছর ৪ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। অপর দিকে মামলার প্রধান আসামি আজাদ হোসেন কালু বিদেশে পালিয়ে যায়। অন্য আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে নিহত কবিতার পিতাকে মারধর ও মাতাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মামলা উত্তোলনসহ নানা ধরনের হুমকি অব্যাহ রেখেছে। অব্যাহত হুমকির মুখে অসহায় পরিবারটি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মামলার এজাহার ও নিহতর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী পৌরসভার সুন্দরদী মহল্লার বাসিন্দা দিনমজুর আয়নাল হক বেপারীর কন্যা টরকী বন্দর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা আক্তার একই উপজেলার ধানডোবা গ্রামের লাল মিয়া চকিদারের পুত্র আজাদ হোসেন কালু চকিদারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রমের টানে কালুর সাথে কবিতা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের আত্মীয়দের মধ্যস্থায় কবিতাকে ফেরত দেয়।
নিহত কবিতার পিতা ও হত্যা মামলার বাদি আয়নাল হক বেপারী জানান, গত ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি সকালে তার কন্যা রহস্যজনকভাবে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে গৌরনদী থানায় তার স্ত্রী (কবিতার মা) শাহানুর বেগম হারানো সাধারন ডায়েরী করেন। নিখোঁজের ৩ দিন পর গত ২ ফ্রেরুয়ারি সকাল ৭টার দিকে তার বাড়ি থেকে ৫শ গজ দুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে রাজু ঘরামীর বাড়ির সম্মুখ ডোবার মধ্যে স্থানীয়রা লাশ দেখতে পায়। পরবর্তীতে গৌরনদী ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্কুল ছাত্রীর কোমড়ে ও গলায় রশি সাথে পাটা বাধা অবস্থায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে ডোবা থেকে লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় তিনি (আইনুল হক) বাদি হয়ে আজাদ হোসেন কালু তার পিতা লাল মিয়া হাওলাদার, খায়রুল সরদারসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান এজাহার ভুক্ত আসামি মৃত নেছার সরদারের পুত্র কালু সরদার ও রব সরদারের কন্যা সোনাই আক্তারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পুলিশ হত্যার কোন রহস্য উদঘাটন করা ও মামলার কোন অগ্রগতি না হওয়ায় তৎকালীন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার হত্যা মামলাটি আলোচিত বিবেচনা করে গত ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করেন।
গোয়েন্দা পুলিশ এজাহার ভুক্ত আসামি মৃত নেছার সরদারের পুত্র রব সরদারকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সকল আসামিসহ অন্যান্য আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। ডিবি পুলিশ গত ২ বছরে একাধিকবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করলেও মামলার কোন অগ্রগতি বা কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।
হত্যা মামলার বাদি আয়নাল হক বেপারী অভিযোগ করেন, মামলা দায়েরের পর পর প্রধান আসামি আজাদ হোসেন কালু বিদেশে পালিয়ে যায়।
বাকী আসামি খায়রুল সরদার, খোকন সরদার, কালু সরদারসহ অন্যান্য আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়। গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর তিনি নিজ বাড়ি থেকে টরকী বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে তাকে উক্ত আসামিরা অর্তকিত হামলা চালিয়ে তাকে মামলা উত্তোলনের জন্য শারীরিক নির্যাতন করেন। তার আত্ম চিৎকারে বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে তাকেসহ তার পরিবারকে জীবন নাশের হুমকিসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বীরদর্পে চলে যায়। অব্যাহত হুমকির মুখে অসহায় পরিবারটি আতঙ্কে জীবন যাপন করছেন। এ ঘটনায় তিনি (আয়নাল) বাদি হয়ে গৌরনদী মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করেন (যার নং ৭৭০ তারিখ ১৯-০১-২০১৮ ইং)।
হামলা ও হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে খায়রুল সরদার বলেন, ‘এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।’
এ ব্যাপারে বরিশাল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ ফিরোজ কবির মুঠো ফোনে বলেন, ‘আমি এ আলোচিত হত্যা মামলার ৬ নম্ভর তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত পূর্বক পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’