সার্বিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছে ব্রাজিল। এ ম্যাচে নেইমারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সার্বিয়া
পশ্চিম দিকের গ্যালারিতে ফুটে থাকা হলুদ সর্ষে খেতের দিকে হাত তুলে যখন বিজয়ী অভিবাদন গ্রহণ করছেন নেইমাররা, তখন দক্ষিণ পশ্চিম কোনা থেকে শুরু করে দক্ষিণ দিকের লাল ঢেউগুলোর দিকে দুহাত তুলে বিদায় অভিবাদন নিল কোলারভের সার্বিয়া। ব্রাজিলের সামনে পড়ে যাওয়াতে এবার হলো না। সামনের বার হয়তো হবে। তত দিন আমাদের সঙ্গেই থাকুন।
গ্যালারির এখানে ওখানে দু-একটি সবুজ-হলুদ-নীল রঙের পতাকা দুলছে। তেমন প্রাণের উচ্ছ্বাস নেই। ব্রাজিল তো শেষ পর্যন্ত জিতল সহজেই। চ্যালেঞ্জ না থাকলে মনের তীব্র আকুলতা ধরা পড়ে নাকি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায়ের দুই ঘণ্টা পর খেলতে নামা ব্রাজিলকে যে একটুও শঙ্কার শীতলতা ছুঁয়ে যায়নি, তা নয়। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যমের অন্দরমহলে ঢুঁ মেরে একটু উদ্বেগের খবর পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মাঠের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো না কিছুই। গোল মাত্র ২টি। বোবা স্কোরলাইন বোঝাতে পারবে না সবগুলো পাপড়ি মেলে কাল কেমন ফুটে উঠেছিল সর্ষে ফুল। যে উইলিয়ানকে নিয়ে উদ্বেগ ছিল তিতের সেই উইলিয়ান একটু ভেতরে ঢুকে কী দারুণ খেললেন। যে পাওলিনহোকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ব্রাজিল কোচ সেই পাওলিনহো জ্বলে উঠে গোল করলেন এবং হলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। সেটপিসগুলো তেমন কাজে লাগাতে পারছিল না, এ ম্যাচে পারল। কর্নার থেকে হেডে গোল করে ৬৮ মিনিটে ২-০ করে দিলেন থিয়াগো সিলভা। রক্ষণকে মিরান্ডা-সিলভা-ফাগনাররা করে তুললেন নিশ্ছিদ্র। এই ব্রাজিলের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল।
ইট-কাঠ পাথর সিমেন্ট ইস্পাত ইত্যাদি দিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যতটা মজবুত করা যায় করেছিল সার্বিয়া। প্রত্যেকেই ছয় ফুটের ওপর লম্বা। দীর্ঘ শরীরের সুবিধাও যতটা নেওয়া যায়, তারা নিচ্ছিল। কিন্তু স্কিলের কাছে শ্রমিকের শরীর বেশিক্ষণ সুবিধা করতে পারে না, যদি খেলাটা হয় ফুটবল। বার তিনেক গ্যালারিতে উহ্, আহ্ শব্দের জোগান দিয়ে ব্রাজিল প্রথম গোলটা পেল ৩৬ মিনিটে। দুই বার্সেলোনা মিডফিল্ডারের যুগলবন্দিতে। অনেক নিচে থেকে বল ধরে নিয়ে দৌড়ে কুতিনহো সেটি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাওলিনহোকে। পাওলিনহো এগিয়ে আসা গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে দিলেন বল (১-০)। পাল্টা আক্রমণের ঢেউ তুলে সার্বিয়া গোল ফেরানোর চেষ্টা অবশ্য করেছে। পারেনি ফিনিশারের অভাবে। ৬০ থেকে ৬৫ মিনিটের মধ্যে দুবার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল সার্বিয়া, গোল কেন পায়নি বলা হয়েছে আগেই।
আসলটা বলতে গেলে বলতে হয়, ব্রাজিল এ ম্যাচ জিততে পারত অনেক বড় ব্যবধানে। এর সঙ্গে একটা দুঃখ তাদের ছুঁয়ে যাবে নেইমার গোল পাননি বলে। গোল পেতে গেলে আর আর কী করতে হবে সে নিয়ে হয়তো ফুটবল বিধাতার কাছে ফরিয়াদ জানাতে পারেন ব্রাজিলিয়ান জাদুকর।
স্পার্তাক মস্কোর খেলার মাঠটা গ্যালারি থেকে এত কাছে যে ম্যাচ শেষ হয়তো তাঁর সঙ্গে করমর্দন করে বলে আসা যেত, আজ গোল হয়নি সমস্যা নেই। তবে অনেক গোল তোমাকে ডাকছে। আর ব্রাজিলকে হাতছানি দিচ্ছে হয়তো সুন্দরতম মুহূর্তগুলো।
আপাতত এর পরের গন্তব্য সামারা। যেখানে শেষ ষোলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মঞ্চ সাজিয়ে রেখেছে এফ গ্রপের রানার্সআপ মেক্সিকো। লড়াইটা একটু হলেও জমবে, সাম্বার সঙ্গে মেক্সিকান লাল-সবুজের একটা পাল্টাপাল্টি চলে চিরকাল। এই মেক্সিকোই চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বুকে প্রথম তিরটা মেরেছিল, আর কাল সাক্ষাৎ মৃত্যুবান হেনেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
শেষ ষোলোয় গ্রুপ থেকে ব্রাজিলের সঙ্গী সুইজারল্যান্ড, যারা ২-২ গোল ড্র করেছে কোস্টারিকার সঙ্গে।