চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট কী তবে বিশ্বাসঘাতকতা শুরু করে দিল মুশফিকুর রহীমদের সঙ্গে? টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর নাথান লিওনের বলের সামনে যখন একের পর এক খাবি খাচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, তখন মনে হচ্ছিল এবারও বুঝি ঢাকার মত উইকেট বানানো হয়েছে!
কিন্তু দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের আগে টাইগারদের অলআউট করে দেয়ার পর অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নামার পরই এই ধারনা বদলে যেতে শুরু করে। বদলে দিতে থাকেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক এবং সহ-অধিনায়ক। স্টিভেন স্মিথ এবং ডেভিড ওয়ার্নার। হাফ সেঞ্চুরি করে স্মিথ বিদায় নিলেও তার দেখানো পথটাকে বেশ আপনই করে নিয়েছেন চার নম্বরে নামা পিটার হ্যান্ডসকম্ব। ডেভিড ওয়ার্নার তো আছেনই।
দ্বিতীয় দিন শেষে তাই বলতেই হচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্টে এখন চালকের আসনে অস্ট্রেলিয়া। কারণ, সারা দিনে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র ২টি উইকেটের পতন ঘটাতে পেরেছেন মোস্তাফিজ-তাইজুলরা। দিন শেষে তাদের রান ২ উইকেট হারিয়ে ২২৫। বাংলাদেশের চেয়ে এখনও ৮০ রান পিছিয়ে তারা। তবুও, বলা যায় ম্যাচে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়াই। ওয়ার্নার এবং হ্যান্ডসকম্ব পুরোপুরি সেট হয়ে গেছেন উইকেটে। তারা দু’জন রয়েছেন যথাক্রমে ৮৮ এবং ৬৯ রানে।
অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের শুরুতেই দুর্দান্ত ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার নিজের প্রথম ওভারেই লেগ সাইড ডেলিভারিতে ব্যাটের কানা লাগিযে দেন ম্যাট রেনশ। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই ক্যাচটি লুফে নেন উইকেটরক্ষক, অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। শুরুতে আনন্দের উপলক্ষ তৈরি হলেও সেটাকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিলেন না স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নার।
এ দু’জনের ৯৩ রানের জুটি তরতরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের বোলারদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে আরেকটি ব্রেক থ্রু এনে দিতে পারলেন তাইজুল ইসলাম। ৫৮ রান করা স্টিভেন স্মিথকে বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান তিনি। এর আগে কিংবা পরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের সামনে বলতে গেলে বাংলাদেশের স্পিনারদের বোলিং ছিল পুরোপুরি নির্বিষ। ঢাকা টেস্টে জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজদের বোলিং কোনো বিপদই ঘটাতে পারলো না অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপে।
এর মধ্যে কিছু হাফ-চান্স মিসের ঘটনাও আছে। ৫২ রানের মাথাতেই আউট হয়ে যেতে পারতেন ডেভিড ওয়ার্নার। তাইজুলের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন তিনি। শর্ট লেগে সেই ক্যাচ মিস করেছেন মুমিনুল হক। তবে এটা ঠিক মুমিনুলের জন্য ক্যাচটি ছিল কিছুটা কঠিনই।
পিটার হ্যান্ডসকম্ব যখন ২২ রানে ছিলেন, তখন তাইজুলের বলে একবার পরাস্ত হন। জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে মুশফিক রিভিউর আবেদন করেন। টিভি আম্পায়ার আলিম দার রিভিউ আবেদন নাকচ করে দেন। সেই হ্যান্ডসকম্ব শেষ পর্যন্ত ৭৪ বলে ক্যারিয়ারে চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন।
৭৩ রানের মাথায় আরও একবার বেঁচে যান ডেভিড ওয়ার্নার। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে নিশ্চিত স্ট্যাম্পিং হতে পারতেন তিনি। উইকেট ছেড়ে সামনে এগিয়ে এসে খেলার চেষ্টা করেন ওয়ার্নার। কিন্তু তিনি পরাস্ত হন। বল চলে যায় উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে। বলটা সময় মত ধরতে পারলে হয়তো স্ট্যাম্পিং করতে পারতেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলই ধরতে পারলেন না। ফলে আবারও বেঁচে গেলেন ওয়ার্নার। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকলেন ৮৮ রানে। হ্যান্ডসকম্ব ৬৯ রানে।
এর আগে মোস্তাফিজ যে ধাক্কাটা দিয়েছিলেন, সেটাকে ওয়ার্নারকে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই সামলে নিয়েছিলেন অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। তুলে নিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ সেঞ্চুরি। যদিও এরপর আর খুব বেশি দুর এগুতে পারেননি। তাইজুলের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা এ ব্যাটসম্যান। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান।
এদিকে প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাট করে সাব্বির আর মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৩০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সাব্বির ১৩৬ বল খেলে করেছেন ৬৬ ও মুশফিকুর রহীম ২৫২ বল খেলে করেছেন ৬৮ রান। হাফ সেঞ্চুরি না পেলেও দলের পূঁজিতে অবদান রেখেছেন সৌম্য, মুমিনুল ও নাসির। তারা যথাক্রমে করেছেন ৩৩, ৩১ ও ৪৫ রান।
অসিদের হয়ে একাই ৭টি উইকেট নিয়েছেন নাথান লিওন। অপর স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগার নিয়েছেন ২ উইকেট। আর মিরাজ রান আউট হয়েছেন।