>> দূর হবে কর্মচারীদের পদোন্নতি না পাওয়ার হতাশা
>> নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করতে খসড়া বিধিমালা তৈরি
>> সংশোধনী গেজেট প্রকাশ এ বছরের শেষে
রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে নৈশপ্রহরী পদে চাকরি করেন সুলতান হোসেন। দীর্ঘ ১২ বছর একই পদে আছেন। একটি পদোন্নতিও পাননি। তার চাকরি জীবনে কোনো দিন পদোন্নতির ফুল ফুটবে কিনা- তাও জানেন না।
এ পদে থেকেই তাকে অবসরে যেতে হবে। তাই অনেক হতাশা আর ক্ষোভ তার মধ্যে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে তার মতো এমন অনেক কর্মচারীর মধ্যেই এ হতাশা রয়েছে। তবে তাদের হতাশা দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাদের পদোন্নতির বিধান রেখে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। এ জন্য একটি খসড়া নিয়োগ বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পদোন্নতি না পাওয়ার হতাশা ও নানাবিধ জটিলতা নিরসনে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে নিয়োগবিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর এ সংক্রান্ত খসড়া তৈরিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে মাউশির প্রশাসন পরিচালক এবং একই মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিবকে সদস্য করা হয়। তাদের নেতৃত্বে একটি খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে।
খসড়া নিয়োগ বিধিমালায় চতুর্থ শ্রেণির ‘ব্লক’ পদগুলোতে (পদোন্নতির সুযোগ নেই) উচ্চমান সহকারী পর্যন্ত পদোন্নতির বিধান রাখা হয়েছে। বিলুপ্ত করা হবে অপ্রয়োজনীয় পদগুলো। এছাড়া বিভিন্ন পদের নতুন নামকরণ, একই পদের একাধিক নাম পরিবর্তন করে ইউনিক পদ সৃষ্টিসহ ১০ থেকে ১২ ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ দূর হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, মাউশি, দেশের নয়টি আঞ্চলিক অফিস, সব জেলার শিক্ষা অফিস, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সব সরকারি কলেজে প্রায় পাঁচ হাজার তৃতীয় শ্রেণির ও প্রায় সাত হাজার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন। ১৯৯১ সালের নিয়োগ বিধিমালার আলোকে এ স্তরের কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতি পরিচালিত হচ্ছে।
মাউশির অধীনে থাকা একাধিক কর্মচারী জানান, একই পদে যুগ পার হয়ে গেলেও তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। দু-একজন উপর মহলে তদবির চালিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় পদোন্নতি নিলেও সৃষ্টপদ না থাকায় অধিকাংশ কর্মচারী তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক পদ রয়েছে যেখানে একবারও পদোন্নতির সুযোগ নেই। কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-অধিদফতরের মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালক বরাবর একাধিক অভিযোগও করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পদোন্নতির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারীরা নানাভাবে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করে আসছেন। অনেকেই হতাশ হয়ে নিজের কাজের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে আবার কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন।
এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামসুল হুদা বলেন, পুরাতন নিয়োগবিধি অনুযায়ী কর্মচারীদের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে অনেকের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর ফলে অনেকে কাজের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা ১৯৯১ সালের কর্মচারী নিয়োবিধি সংশোধনের কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে খসড়া তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন দেয়া হলে তা আবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসবে। এরপর সেটি গেজেট আকারে প্রকাশের পর বাস্তবায়ন হবে। চলতি বছরের শেষের দিকে সংশোধিত নিয়োগ বিধিমালার গেজেট প্রকাশ হতে পারে।
বর্তমান নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি কলেজে বেয়ারাসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ দেয়া হয়। খসড়া নিয়োগবিধিতে দেখা যায়, এমন কয়েকটি পদ বিলুপ্ত করে ক্যাশ সরকার নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। মাউশির অধীনে বিভিন্ন কলেজ ও দফতর-সংস্থায় নিয়োগপ্রাপ্ত নৈশপ্রহরীসহ কয়েকটি ‘ব্লক’ পদ রয়েছে। খসড়ায় সেসব পদে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে একজন নৈশপ্রহরী উচ্চমান সহকারী পর্যন্ত পদোন্নতি পাবেন।
এছাড়া মাউশির অধীনে লাইব্রেরিয়ানের একাধিক পদ পরিবর্তন করে ইউনিক পদের মাধ্যমে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের পদোন্নতি দেয়া হবে। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে নতুন করে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে সব কর্মচারীই নির্ধারিত সময়, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বলেন, কর্মচারীদের নিয়োগ-পদোন্নতিতে সৃষ্ট নানা সমস্যার সমাধানে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। চলতি বছরের শেষের দিকে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ হচ্ছে।