আস্থা-অনাস্থায় ঝুলছে ‘বৃহত্তর ঐক্য’

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

দফায় দফায় ‘জাতীয় ঐক্য’ ও ‘বিকল্প জোট’ গঠনের ডাক দিলেও নীতি-কর্মসূচি আর আস্থা-অনাস্থায় বিলম্বিত হচ্ছে বৃহত্তর ঐক্যের প্রক্রিয়া। তবে জাতীয় ঐক্য বা বিকল্প জোটের উদ্যোক্তারা মনে করেন, এ উদ্যোগ আলো দেখাতে পারে শুধুমাত্র রাজপথ। বিকল্প জোট গঠনের উদ্যোক্তারা এমন তথ্যই জানালেন।

জোটের উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রবীণ আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন দীর্ঘদিন জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে তিনদলীয় জোট। আ স ম আবদুর রব নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এ জোটের অন্যতম শরিক।

 জোট তো হয়েই গেছে। ব্যক্তি ও দলগত পর্যায়ে অনেকে যোগাযোগ করছেন, আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এগুলো পুরোপুরি হয়ে গেলে যথাসময়ে জানানো হবে 

ড. কামাল হোসেন জোটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি। একই পথে হাঁটছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

অপরদিকে বাম দলগুলোর ঐক্য গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতারা।

তাদের মতে, সিপিবি-বাসদের মাঝে একটা ঐক্য আছে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সঙ্গে সিপিবি-বাসদ জোটের একটা সমঝোতাও রয়েছে। এর বাইরে যারা বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কথা বলছেন তাদের কর্মসূচি এবং রাজপথের অবস্থান ‘অস্পষ্ট’।

জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্য এখনই গড়ে না উঠলেও স্ব স্ব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঐক্যপন্থী নেতারা নিয়মিত যোগদান করছেন। এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনায় ঐক্য প্রক্রিয়াটি সম্ভাবনাময় হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।

 জনগণের প্রয়োজনে ঐক্য হলে সেটা কিছুটা কাজে লাগতে পারে। ঐক্য না হলে সুবিধার জন্য সেটা করে কোনো লাভ হবে না 

যুক্তফ্রন্টের নেতারা মনে করেন, এটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় জোট হবে। ইতোমধ্যে জোট গঠন হয়েছে। ব্যক্তি ও দলগত পর্যায়ে অনেকের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছেন জোট উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, এ জোটে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। সর্বশেষ গত মাসেও যুক্তফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রবীণ এ আইনজীবী। এরপর দুই মাসের জন্য দেশের বাইরে চলে যান।

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, জোট তো হয়েই গেছে। ব্যক্তি ও দলগত পর্যায়ে অনেকে যোগাযোগ করছেন, আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এগুলো পুরোপুরি হয়ে গেলে যথা সময়ে জানানো হবে।

তবে এ বিষয়ে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমরা তো দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে নীতিতে দেশ পরিচালনা করছে তার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করছি। এ দুই শক্তির বাইরে জনগণের প্রয়োজনে আমরা তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি চাই। আমাদের বাইরে যারা চান, তারা তাদের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আসুক। তারা কী চায়? তাদের চাওয়া সম্পর্কে জনগণের অবস্থান জানার পর এ বিষয়ে কথা হতে পারে।’

 আগে আমরা বামদলগুলো একটা জোটে আসি, এরপর বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে কথা বলা যাবে 

তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র বিবৃতি, সেমিনার করলে হবে না, রাজপথে আসতে হবে। রাজপথই আমাদের বলে দেবে। তাই কর্মসূচি নিয়ে আগে রাজপথে আসতে হবে। জনগণের প্রয়োজনে ঐক্য হলে সেটা কিছুটা কাজে লাগতে পারে। ঐক্য না হলে সেটা সুবিধার জন্য করে কোনো লাভ হবে না।’

বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা (বাসদ) ও সিপিবি একটা জোটে আছি। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সঙ্গে আমাদের একটা সমঝোতা আছে। কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মাঝে আলাপ-আলোচনা চলছে। অন্যদিকে বি. চৌধুরী সাহেব ও ড. কামাল হোসেন সাহেবরা জোটবদ্ধ হননি। আগে আমরা বামদলগুলো একটা জোটে আসি, এরপর বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে কথা বলা যাবে।’

কর্মসূচিতে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমরা আমাদের কথা বলতে যাই, ওনারা ওনাদের কথা বলতে আসেন।’

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মনে করি বর্তমান সরকার যে নীতিতে দেশ পরিচালনা করছে, সে নীতি মুক্তিযুদ্ধের পরিপন্থী। সে ক্ষেত্রে আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-জামায়াতের বাইরে সবাইকে নিয়ে এ ঐক্য হতে পারে। সবার সঙ্গেই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাপ্রত্যাশীদের বাইরে জনগণের স্বার্থ রক্ষাকারী বিকল্প একটি শক্তি গড়ে তোলার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছি। সে ক্ষেত্রে সবকিছুই ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে।’