‘আর্জেন্টিনার আছে বিশ্বসেরা ফুটবলার, ব্রাজিলের বিশ্বসেরা আক্রমণ’

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

ব্রাজিলের কোচিং লিজেন্ডদের একজন কালোর্স আলবার্তো পেরেইরা। ব্রাজিলকে ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। ছিলেন ব্রাজিলের ১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের কোচিং স্টাফদের একজন। এছাড়া ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রতিটি বিশ্বকাপেই তিনি কোন না কোনভাবে বিশ্বকাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন। যারা ফুটবল বোঝেন পেরেইরা তাদের মধ্যে উপরের দিককার একজন। এটা তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন। তিনি তার ফুটবল স্মৃতি, রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে প্রত্যাশাসহ নানা দিক নিয়ে ফিফাডটকমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার বিশেষ বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: কোন বিশ্বকাপের স্মৃতি সবচেয়ে বেশি মনে আছে?

পেরেইরা: আমি কি দুটি বিশ্বকাপের স্মৃতির কথা বলতে পারি (হাসি)? আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ করেছিলাম বলে ১৯৭০ বিশ্বকাপ স্মৃতিতে লেপ্টে আছে এমন না। আমি সেবার নতুন দলের কোচিং স্টাফ হয়েছি। আমি ওই বিশ্বকাপের সবকিছু পয় পয় করে বলতে পারি। পেলের সঙ্গে কাজ করা। তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া সবকিছু ছিল দারুণ। এরপর ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। আমরা ২৪ বছর পরে আবার শিরোপা জিতলাম। আমি দলটির প্রধান কোচ ছিলাম। খুব চাপ ছিল সেবার।

প্রশ্ন: ওই দুই বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্ত কী? বেঞ্চে বসে পেলেকে দেখা। নাকি ১৯৯৪ বিশ্বকাপে কোচ হিসেবে শিরোপা জেতা?

পেরেইরা: দুটোর অনুভূতি আলাদা। কিন্তু গুরুত্বে বিচারে দুটোই সমান। দুটোই আপনাকে সামনে ধাবিত করবে। ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করা অবশ্যই দারুণ ব্যাপার। তবে পেলের মতো বন্ধু পাওয়াও কোন অংশে কম না। বিশ্বসেরা হওয়ার ওই সফরের কথা কোনভাবেই ভোলা সম্ভব না। তবে সবাই বলে, কালোর্স আলবার্তো পেরেইরা ব্রাজিলের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ী কোচ। এটা আলাদা একটি লেবাস লাগিয়ে দিয়েছে। যা চাইলেও ঝেড়ে ফেলা সম্ভব না।

প্রশ্ন: ১৯৭০ বিশ্বকাপের পর খেলায় কী পরিবর্তন দেখেন?

পেরেইরা: অনকে বলে আগের সময়ে ফুটবল আর্কষণীয় এবং উপভোগ্য ছিল। এখনকার ফুটবল যান্ত্রিক। আমি এটার সঙ্গে একমত না। ১৯৬৬ সালের পরে ফুটবলে একটা নতুন ধারণা এসেছে। ‘খেলো এবং অন্যদের আটকাও।’ ফরোয়ার্ডরা তখন ডিফেন্সে নেমে আসলো। তবে ১৯৭০ সালের দিকে ফুটবলাররা মাঠে ম্যাচ প্রতি চার থেকে ছয় কিলোমিটার দৌঁড়াতো। আর এখন ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার দৌঁড়ায়।

আমি দারুণ খুশি যে কৌশল বদলেছে। তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে আপনার প্রতিভাবান ফুটবলার দরকার। প্রতিভা আপনার ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে। আপনার হাতে দুই থেকে তিনজন প্রতিভা থাকা চাই। একজন নেইমার, একজন মেসি কিংবা রোনালদো আপনাকে ওই পার্থক্যটা গড়ে দেবে।

প্রশ্ন: রাশিয়া কেমন ফুটবল আশা করছেন?

পেরেইরা: ঠিক এইভাবে; দল হয়ে খেলবে এবং যতবেশি সম্ভব খেলোয়াড় দিয়ে রক্ষণ সামলাবে। এরপর প্রতিপক্ষের উপর চাপ বজায় রাখবে এবং গতি দিয়ে তাদের রক্ষণ দেয়াল ভেঙে ফেলবে। এছাড়া কার্যকরী কিছু দল বলের পেছনে ছুটে খেলবে। জায়গা ছাড়বে না এবং আক্রমণের গতি দিয়ে খেলা নিয়ন্ত্রনে রাখবে।

প্রশ্ন: ব্রাজিল বিশ্বকাপে (২০১৪) অনেক গোল হলো। এবারও কি কেমন কিছু আশা করছেন?

পেরেইরা: এটা ভালো প্রশ্ন। উত্তর দেওয়া কঠিন। গড়ের হিসেবে গোলের মাত্রাটা ঠিক থাকবে (অন্য বিশ্বকাপের সঙ্গে) এমন কিছু দেখতে চাই। রেকর্ড ভাঙার মতো গোল দেখতে চাই না।

প্রশ্ন: ভারের (ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারি) প্রভাব কেমন আশা করছেন?

পেরেইরা: আমি চাই সন্দেহ দূর হোক, অনিশ্চয়তা কেটে যাক এবং সিদ্ধান্তগুলো পক্ষপাতদুষ্ট না হোক। এটা রেফারিকে আরো বেশি সচেতন হয়ে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করবে। ফাইনালে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হতে দেখা গেছে কোন কোন দলকে। কিন্তু এখানে রেফারির ভুল করার সুযোগ নেই। সেরা দলই বিশ্বকাপ জিতবে। তবে প্রথমবার হচ্ছে বলে কারো কারো মনে প্রশ্ন থাকতে পারে। আমি মনে করি এটা বেশ কার্যকরী হবে।

প্রশ্ন: শেষ তিনটি বিশ্বকাপ ইউরোপের দেশগুলো ঘরে তুলেছে (ইতালি, স্পেন, জার্মানি। এবার কি ইউরোপের বাইরের কোন দল জিততে পারে বলে মনে করেন?

পেরেইরা: যদি ইউরোপের বাইরের কোন দেশের কথা বলেন, তবে দক্ষিণ আমেরিকার কথা বলতে হবে। দক্ষিণ আমেরিকায় এই প্রভা ভাঙার মতো দুটি দেশ আছে। একটি ব্রাজিল। অন্যটি আর্জেন্টিনা। অনেকে বলছে আর্জেন্টিনা বাছাইপর্বে খারাপ করেছে। তবে তাদের বিশ্ব আসরে দারুণ ঐতিহ্য আছে এবং তাদের দলে আছে বিশ্বসেরা ফুটবলার।

আর ব্রাজিলের নেইমার, কৌতিনহো, জেসুস, ফিরমিনো, ডগলাস কস্তাদের নিয়ে আছে বিশ্বসেরা আক্রমণ। যারা রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জিততে পারে তাদের মধ্যে আর কোন দলের এমন আক্রমণ নেই। যদিও বিশ্বকাপ জেতার জন্য এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। জিততে হলে আপনার সামঞ্জস্যপূর্ণ দল হাতে থাকতে হবে।