সফরসূচিতে পরিবর্তন, শিশুদের জন্য সাহায্য চাইলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

সোমবার কক্সবাজারে আসার পর থেকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বলিউড তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। আজ মঙ্গলবার সারা দিন বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করার পথ পরিদর্শন করেন এ নায়িকা। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যেখানে যাচ্ছেন, তাঁর আশপাশে সংবাদমাধ্যমের কোনো কর্মীকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁর সফরসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে আর তা গোপন রাখছেন ইউনিসেফের স্থানীয় কর্মকর্তারা। তবে প্রিয়াঙ্কা রোহিঙ্গাদের কোনো অস্থায়ী শিবির বা রোহিঙ্গা শিশুদের স্কুল পরিদর্শন করেই ইনস্টাগ্রামে সেখানকার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছেন।

মঙ্গলবার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি স্কুল পরিদর্শনে যান প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সেখানে তাঁকে খুব সুন্দরভাবে বরণ করে নেন স্থানীয় লোকজন। সেই স্কুলে কাটানো সময়ের ছোট একটি ভিডিও ক্লিপ মঙ্গলবার বিকেলে ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করেছেন তিনি। এ ছাড়া আজ নাফ নদীর তীরে যান প্রিয়াঙ্কা। রোহিঙ্গারা কোনো পথে ও কীভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সেটি দেখার জন্যই ইউনিসেফ টিমের সঙ্গে সেখানে যান তিনি।

নাফ নদীর সামনে তোলা একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করে প্রিয়াঙ্কা লিখেছেন, ‘মিয়ানমারের নাফ নদীর তীরে। এখন এই জায়গাটিকে খালি দেখছেন। কিন্তু কয়েক মাস আগেও শত শত লোকে ভরা ছিল এ জায়গা। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা এখানে হাজির হয়। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার তাদের এ যাত্রা ছিল ভীষণ কঠিন ও ভয়াবহ। তাদের অনেকেই পায়ে হেঁটে, পাহাড় পার হয়ে অথবা নৌকায় ভেসে এখানে আসে। তাদের কেউ এই নাফ নদী, নয়তো বঙ্গোপসাগর পার হয়ে এই দেশে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল বয়স্ক, আহত ও অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু এখানেই তাদের কষ্টের সমাপ্তি হয়নি। বাংলাদেশে প্রবেশের পর তাদের দিনের পর দিন এখানে অপেক্ষা করতে হয়। না খেয়েই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়। কখন তাদের জন্য কেউ সাহায্য নিয়ে আসবে, সেই অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকতে হয় তাদের।’

বলিউডের জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী আরও লেখেন, ‘এ ভোগান্তি অনেক রোহিঙ্গা শিশুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। আপনারা সাহায্য করলে হয়তো এ শিশুদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হতে পারে। কারণ, এখন তাদের জীবন একেবারেই বর্ণহীন। এ বিশ্বের তাদের ব্যাপারে ভাবতে হবে। আমাদেরও তাদের কথা ভাবতে হবে।’ এরপর ইউনিসেফের মাধ্যমে সবাইকে রোহিঙ্গা শিশুদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রিয়াঙ্কা।

নিরাপত্তার কড়াকড়িতে বিরক্ত প্রিয়াঙ্কা
মঙ্গলবার সকালে উখিয়ায় রয়েল টিউলিপ হোটেল থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যখন হাঁড়িখালী পৌঁছান, তখন সকাল ৯টা ৩২ মিনিট। রোহিঙ্গারা যে পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে, ভাঙার সেই স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। গাড়ি থেকে নেমে সেই পথে তিনি কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করেন। সেখান থেকে নাফ নদী আর মিয়ানমার দেখা যায়। এখানে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন, হাসাহাসি করেন, ছবি তোলেন।

এ সময় নিরাপত্তার কড়াকড়ি দেখে বিরক্ত হন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। নিরাপত্তা কমানোর জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন। এখান থেকে গাড়িতে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে টেকনাফের নেটং (উটনি) পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। এই পথে নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে কীভাবে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে, তা প্রিয়াঙ্কার সামনে তুলে ধরা হয়। এখানে ১৫ মিনিট অবস্থান করেন তিনি।
এরপর লেদা বিজিবি চৌকির কাছে ইউনিসেফ পরিচালিত শিশুদের খেলাধুলার জন্য তৈরি স্থান পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে তাঁর লেদায় অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি। পরে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে ইউনিসেফের গাড়িবহর উখিয়ার বালুখালীতে স্থাপিত অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরের দিকে রওনা হয়।

আগেই জানানো হয়েছে, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বাংলাদেশে এসেছেন। সোমবার সকাল আটটায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। এখানে ঘণ্টা তিনেক অবস্থান করার পর তিনি কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে প্রিয়াঙ্কাকে উখিয়ায় রয়েল টিউলিপ হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কক্সবাজারে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থাকবেন। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিলের (ইউনিসেফ) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। গতকাল সোমবার বিকেলে টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর মনখালী ব্রিজের পাশে অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে যান প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সেখানে ইউনিসেফ পরিচালিত হাসপাতালে যান। রোহিঙ্গা শিবিরের শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাদের স্বাস্থ্য আর পড়াশোনার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন।